বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ, ১৪৩১
মোঃ আসাদুজ্জামান, ঠাকুরগাঁও।।
আর ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে চায় না সে। সবার সঙ্গে হাসিখুশি ও খেলাধুলা করতে চায় সে। তবে পরিস্থিতির কাছে আজ যেন সে বড়ই অসহায়। থমকে গেছে তার স্বপ্ন। অসুস্থতার কারণে ঘরে বন্দিজীবন পার করছে মনীষা আখতার (১৩)।
মনীষা আখতার ঠাকুরগাঁও রোড সুগারমিল উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার হরিহরপুর গ্রামের আব্দুল রহমান ও দেলোয়ারা বেগমের সন্তান মনীষা আখতার। পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে সে আজ জীবন-মরণের লড়াইয়ে আছে। তার চিকিৎসাও একপ্রকার অনিশ্চিত।
মনীষা কি হাঁটতে পারবে কখনো? নাকি অর্থের অভাবে সারা জীবন কাটাতে হবে বিছানায়? পরিবারের সবার মনে এমন রাজ্যের হতাশা বিরাজ করছে। হরিহরপুর গ্রামের আব্দুল রহমানের বাসায় গেলে এমনই চিত্রই চোখে পড়ে।
সারেজমিনে দেখা যায়, মুখে হাসি, হাতে ফোন নিয়ে বিছানায় শুয়ে রয়েছে শিশু মনীষা। নিজের কষ্টের কথা যেন বলতে বলতে নিরুপায় হয়ে পড়েছে সে। অবশেষে ইউটিউবকেই যেন নিজের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছে সে।
জানা যায়, একটি সময় ভালোই দিন কাটছিল মনীষার। বন্ধুদের সঙ্গে একযোগে যেত স্কুলে। হঠাৎ যেন তার হাত-পা থেকে শুরু করে পুরো শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে শুরু করে। ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় তার খাওয়া দাওয়া। অবশেষে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের দিকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ধরা পড়ে, তার মেরুদণ্ডে পানি জমেছে।
এলাকার মানুষ ও স্বজনদের কাছে হাত পেতে চিকিৎসার খরচ জোগাড় করে মনীষার পরিবার। এরপর রংপুর মেডিকেলে কিছুদিন চিকিৎসা নেওয়ার পরও কোনো উন্নতি না হওয়ায় তাকে স্থানান্তর করা হয় বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে থেরাপি দেন চিকিৎসক। সেখানেও কোনো আশার আলো না দেখতে পেয়ে পরিবার তাকে পুনরায় নিয়ে আসে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে সবশেষে এমআরআই করার পরে ধরা পড়ে মনীষার মেরুদণ্ডে ক্যানসার।
এমনটা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা। যেখানে রংপুর-বগুড়া যাতায়াত করার টাকা নিয়ে টানাহেঁচড়া, সেখানে এত বড় অপারেশন করবেন কী করে। এ নিয়ে চিন্তায় পড়ে পরিবার। কী করে বাঁচাবেন শিশুটিকে? এমন হতাশা দিন দিন গ্রাস করছে তার মা-বাবাকে।
মনীষা আখতার বলেন, আমি হাঁটতে পারি না। শুধু বসে আর শুয়ে থাকি। অনেক দিন ধরে বিছানায় শুয়ে আছি। খাইতে পারি না। খাইলে বমি হয়। বাবা-মাকে বলছি যাতে আমাকে সুস্থ করার ব্যবস্থা করে। কিন্তু আমরা তো গরিব। কীভাবে কী করব? আমার চিকিৎসা করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। আমার বাবার সামর্থ্য নেই। যেন সবাই একটু সাহায্য করেন।
মনীষার বড় বোন মুন্নি বেগম বলেন, তার জন্মের পর থেকে দেখে আসছি আমার বোনটা খুব হাসিখুশি থাকতো। পড়াশোনায়ও ভালো সে। কিন্তু এই অসুস্থতার কারণে আজ তার জীবনটা যেন থমকে গেছে। আমার বাবার তেমন কোনো আয় নেই। বোনের দিকে তাকাতে পারি না। তাকালেই চোখ দিয়ে পানি ঝরে। আজ অর্থের অভাবে আমার বোন অসহায়ের মতো পড়ে আছে। এ পর্যন্ত চিকিৎসায় প্রায় দুই লাখ টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু আর খরচ করার মতো তো সামর্থ্য আমাদের নেই।
মনীষার মা কান্নাজনিত কণ্ঠে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই মেয়েটির মুখে কোনো হাসি দেখতে পাই না। সবার কাছে হাত পেতে যা পেয়েছি, তা দিয়েই আজ পর্যন্ত মেয়ের চিকিৎসা খরচ চালাচ্ছি। এখন মেয়েটি আমার বিছানায় পড়ে আছে। আমি অন্যের বাসায় কাজ করি। কী করে সামনে তার চিকিৎসা করাবো ? এ পর্যন্ত লাখ টাকার ওপর খরচ হয়ে গেছে। যেখানে পরিবারই ঠিকমতো চলে না, সেখানে মেয়েটির জন্য আর কী করব? চিকিৎসক বলেছেন মেয়েকে হুইলচেয়ারে রাখতে। কই পাব টাকা? আমার অনুরোধ সরকারের কাছে, যাতে আমার মেয়টিকে একটু সাহায্য করেন।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, যেহেতু শিশুটি কষ্টে দিন পার করছে, আমি চেষ্টা করব তাকে সাহায্য করার। তবে তার পরিবারকে একটি আবেদন করতে হবে। সেই সঙ্গে এখন পর্যন্ত যেখানে যেখানে চিকিৎসা করেছে, সেখানকার কাগজগুলো নিয়ে আসতে হবে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে তাকে সমাজসেবার মাধ্যমে সাহয্য করা হবে।