শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১
অনলাইন ডেস্ক।।
নৌপথে ঈদুল ফিতরের যাত্রায় লাগবে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ফটোকপি। বেশি ভাড়া আদায় করা যাবে না। কালবৈশাখী মৌসুম হওয়ায় ওভারলোড ঠেকাতে থাকবে কড়া নজরদারি। রাতে বন্ধ রাখা হবে স্পিডবোট ও বাল্কহেড। দুর্ঘটনা এড়াতে চাঁদপুরের মেঘনা-ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় ঘূর্ণাবর্ত এলাকা মার্কিং করা হবে। ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও যাত্রী হয়রানি প্রতিরোধে পুলিশের টহল জোরদারসহ ৪৮টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। লঞ্চ মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ১৩ মার্চ এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এরই মধ্যে ঢাকা নদীবন্দরের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা বিভাগ, বন্দর ও পরিবহন বিভাগ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসন/বিআইডব্লিউটিএ), নৌ পরিবহন অধিদপ্তর, পরিবহন পরিদর্শক, লঞ্চ মালিক সমিতি, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিআইডব্লিউটিএ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এতে সরকারি সংস্থাগুলোকে কঠোরভাবে তদারকির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফিটনেসবিহীন নৌযান ও ফেরি চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখতেও বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের আশা, সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে নৌপথে মানুষের ঈদযাত্রা হবে নিরাপদ ও স্বস্তির। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতি ঈদেই এমন সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু দুর্ভোগ পিছু ছাড়ে না। বিশেষ করে মালপত্র পরিবহনে শ্রমিকদের অত্যাচার ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ হয় না।
সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় লঞ্চ ভাড়া ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ৩ এবং এর বেশি দূরত্বের জন্য ২ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করে। জনপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া ৩৩ টাকা করা হয়। ১৩ মার্চের সভায় বলা হয়, সরকার নির্ধারিত এ ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় করা হলে সংশ্লিষ্ট লঞ্চ মালিক/চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, ঈদের আগে-পরে ১০ দিন সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া এবং অন্যান্য নদীবন্দর থেকে সদরঘাটমুখী নৌযানে মালপত্র বহন করা যাবে না। বিআইডব্লিউটিএ নির্ধারিত ভাড়া দিয়ে বহন করা যাবে মোটরসাইকেল। ৬ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। নৌ পথে ডাকাতি, চাঁদাবাজি, শ্রমিক ও যাত্রী হয়রানি প্রতিরোধে রাতে টহল দেবে পুলিশ। প্রতিটি লঞ্চের মাস্টার ও চালককে ইউনিফর্মে থাকতে হবে। প্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখতে হবে। মাঝ নদীতে লঞ্চ রাখা যাবে না এবং নৌকায় করে যাত্রী ওঠানো যাবে না। ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী ও ছাদে কাউকে তোলা যাবে না। সদরঘাটে প্রবেশের ১৪টি পথে যাত্রী নিয়ন্ত্রণে ডিএমপি ও বিআইডব্লিউটিএ ছাড়াও বিএনসিসির স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবে।
এ ছাড়া লঞ্চঘাটকেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনা জোরদারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা নদীবন্দর পর্যন্ত সড়ক একমুখী, ফুটপাত দখলমুক্ত, সদরঘাট থেকে বাদামতলী ও ফরাশগঞ্জ, লালকুঠি হয়ে সদরঘাট পর্যন্ত রাস্তার চলাচল স্বাভাবিক রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ঢাকা নদীবন্দরের উপপরিচালক (বন্দর ও পরিবহন বিভাগ) এ কে এম কায়সারুল ইসলাম বলেন, ঈদে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য ভ্রমণের জন্য এবার নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঘাটমুখী সড়ক যানযটমুক্ত রাখা হবে। টার্মিনাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও হকারমুক্ত রাখা হবে। লঞ্চের অবস্থান জানাতে করা হবে মাইকিং। নির্দিষ্ট পন্টুন থেকে নির্ধারিত লঞ্চ ছেড়ে যাবে। যাত্রী হয়রানির অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত। সার্বিক কার্যক্রম তদারকিতে একটি নিয়ন্ত্রণ ও তথ্যকেন্দ্র থাকবে। তিনি আরও বলেন, গত বছর ঢাকা থেকে ২০৪টি লঞ্চ চলাচল করলেও এবার তা একটু কম হবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঈদ ঘিরে লঞ্চ মালিকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ সব সময় থাকে। সঙ্গে লঞ্চঘাটে শ্রমিকদের চাঁদাবাজি তো আছেই। নৌযাত্রায় যাত্রীদের জীবন রক্ষাকারী পর্যাপ্ত বয়া ও লাইফ জ্যাকেট নেই। নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রায় ঘোষণা নয়, সিদ্ধান্ত কার্যকর দরকার।