শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ, ১৪৩১
কাজী সাঈদ, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)।।
কুয়াকাটায় রাখাইন সম্প্রদায়ের বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শুভ প্রবারণা উৎসব ফানুস উড়ানোর মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে। রবিবার (০৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আকাশে শত শত রঙিন ফানুস উড়িয়ে এবারের প্রবারণা উৎসবের আয়োজন শেষ করেছে এ সম্প্রদায়টি। এ উৎসবে মেতেছে রাখাইন পাড়ার কিশোর-কিশোরীসহ সব বয়সের মানুষ। এ উৎসবকে ঘিরে রাখাইন পাড়ায় পাড়ায় ছিলো নানা রকম বাহারি পিঠা-পায়েস তৈরীর উৎসব। উৎসবকে কেন্দ্র করে রাখাইনদের বিভিন্ন পাড়াসহ বৌদ্ধ বিহারগুলো সাজানো হয়েছে নানা সাঁজে। শুভ প্রবারণা উপলক্ষ্যে বরগুনা ও পটুয়াখালী উপকূলীয় এলাকার রাখাইন পল্লীতে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ।
বৌদ্ধ ভিক্ষু সূত্রে জানা গেছে, বৌদ্ধ ধর্ম অনুযায়ী আষাঢ়ী পূর্ণিমাতে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাব্রত শুরু হয়ে এ পূর্ণিমাতে শেষ হয়। কার্তিকের এ পূর্ণিমার তিথিতে কুয়াকাটার রাখাইন স¤প্রদায় প্রবরণা উৎসব পালন করেন। এ সময় বৌদ্ধ বিহারগুলোতে ৩ দিন ব্যাপী গৌতম বুদ্ধের স্মরণে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পাদন করা হয়। রাতে আকাশে উড়ানো হয় নানা রঙের ফানুস। এ দিনে রাখাইনরা আপ্যায়ন, অভিলাস পূরণ, ধ্যান শিক্ষা ও কর্মসম্পাদনের লক্ষ্যে প্রতিদিন সকালে পরিস্কার পোশাকে বিভিন্ন বিহারে গমন করে।
রাখাইনদের ধর্মজাযক গৌতম বুদ্ধ মূলত একজন শাসক ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি বুঝতে পারেন তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে ধর্ম প্রচারের কাজে। তাই সংসার জীবনের মায়া বিসর্জন করে ধর্ম প্রচারের জন্য আত্মনিয়োগ করেন। তিনি নিজ গৃহ ত্যাগ করে ভারতের কপিলা বস্তু নামক স্থানে পূণ্যকর্ম সম্পাদন করেন। পরে গৃহে প্রত্যাবর্তন করলে অনেকে তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেনি। তখন এক পরীক্ষায় অবর্তীর্ণ হন তিনি। নিজের চুল তলোয়ার দিয়ে কেটে আকাশে ছুঁড়ে মেরেছিলেন। সে চুল আর পৃথিবীতে ফিরে আসেনি। আকাশেই অদৃশ্য হয়ে যায়। গৌতম বুদ্ধ সেই পরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন। গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করতে বৌদ্ব ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর এ সময় ফানুস উড়িয়ে এবং ধর্মীয় নানা আয়োজনের মাধ্যমে গৌতম বৌদ্ধকে স্বরণ করে আসছে।
গোড়া আমখোলা পাড়ার বিজয় রামা বিহারের ভিক্ষু উ-সুচিটা বলেন, ‘বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব এ প্রবারণা পূর্ণিমা। এই দিন গৌতম বুদ্ধ ধর্ম প্রচার শুরু করেন। এ কারণে এই দিনটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।’
এ প্রসঙ্গে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার আবুল খায়ের বলেন, ‘এটি রাখাইনদের উৎসব হলেও বর্তমানে সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রতিটি পাড়ায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করেছেন। রাখাইনদের প্রত্যেকটি পাড়ায় নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি টহল পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’