শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
অনলাইন ডেস্ক।।
কুমিল্লার দেবিদ্বারে মুহিন নামে এক কলেজছাত্রের মৃত্যুকে ঘিরে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। প্রেমিকার বাবা ও ভাইয়েরা মিলে তাকে হত্যা করেছে বলে ঘটনার চার দিন পর এমন দাবি করেছে মুহিনের পরিবার। তবে প্রেমিকার পরিবারের দাবি মুহিন বিষপানে আত্মহত্যা করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) বিকেলে মুহিনের মা সুরাইয়া বেগম জানান, ‘মুহিনকে তারা মেরে ফেলেছে। ছেলে হত্যার বিচার চাই। মরদেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের জন্য রোববার আবেদন করবো, আশা করি ন্যায় বিচার পাব।’
নিহত মুহিন ওই ইউপির চুলাশ গ্রামের সৌদি প্রবাসী আবুল হাশেমের ছেলে।
মুহিনের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে মুহিন ও রিয়ার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার রাজামেহার ইউপির বেতরা গ্রামের প্রেমিকা রিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
প্রথমে রিয়ার পরিবার দুইজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে ও এটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেন।
স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী নিহত মুহিনের স্বজনদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করতে বাধ্য করে। পরে চার দিন পর মুহিনের ফোন থেকে মুহিন ও রিয়ার একান্ত মুহূর্তের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মুহিন ও রিয়ার প্রেমের সম্পর্ক জানার পর ঘটনা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।
প্রেমিকা রিয়া মনি একই ইউপির বেতরা গ্রামের আবুল হাশেম বেপারীর মেয়ে। সে স্থানীয় মরিচা ছায়েদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
বুধবার বিকেলে মুহিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মুহিনের মা সুরাইয়া বেগম মুহিনের এসএসসি পাশের সার্টিফিকেট ও কিছু ছবি নিয়ে আহাজারি করছেন। পাশেই হাউমাউ করে কাঁদছেন বড় বোন আয়েশা আক্তার।
তারা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মুহিন আত্মহত্যা করেনি। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা এ হত্যার বিচার চাই।
নিহত মুহিনের বন্ধু মিনহাজ জানান, গত ৫/৬ মাস আগে রিয়ার ভাইয়েরা রিয়াকে ইভটিজিং এর অভিযোগ এনে মরিচা ছায়েদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়ে মুহিনকে মারধর করে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় লিখিত একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে মুহিনকে ছাড়িয়ে নেন তার মা।
নিহতের পরিবার ও মুহিনের বন্ধুরা জানান, গত শনিবার রাতে মুহিন ও রিয়া দুইজনই পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে রিয়ার বাড়ির আঙ্গিনায় মিলিত হয়। পরে রাত পৌনে ১০টার দিকে রিয়ার বড় ভাই মেহেদি হাসান মুহিনের খালাতো ভাই আবু তাহেরের কাছে ফোন করে বলেন, ‘তোর ভাই এখানে বিষ খেয়েছে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যা’।
নিহতের খালাতো ভাই আবু তাহের জানান, রিয়ার বড় ভাই মেহেদির ফোন পেয়ে দ্রুত রিয়ার বাড়িতে আসি। এসে দেখি মুহিন রিয়ার বাড়ির পেছনের পাকা সড়কে দুই পা হাঁটু ঘেরে মাথা নিচের দিকে ঝুঁকে বসে আছে। এ সময় তাকে খুব অসুস্থ দেখা গেছে। পাশে রিয়ার বাবা ও তার দুই ভাই মেহেদি ও জামাল দাঁড়িয়ে আছে। সিএনজিতে মুহিনকে উঠানোর জন্য মেহেদি ও তার বাবাকে বলার পরও তারা কেউ এগিয়ে আসেননি। হাসপাতালে নেয়ার পথেই মুহিনের মৃত্যু হয়। মুত্যুর সময় তার মুখে বিষের কোনো গন্ধ পাওয়া যায়নি।
প্রেমিকা রিয়া মনি মুহিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ছবিগুলো পাওয়া গেছে ছবিগুলো আমার ও মুহিনের। মুহিন আমাকে বাড়ি থেকে পালানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে চাপ দিতো। তার সঙ্গে না পালালে সে আমার বাড়িতে এসে সুইসাইট করবে বলে আমাকে একাধিকবার বলেছে।’ ওই রাতের বিষয়ে জানতে চাইলে রিয়া এড়িয়ে যান।
রিয়ার সহপাঠী সুমি আক্তার জানান, মুহিন ও রিয়ার মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক ছিলো।
এ ব্যাপারে রিয়ার বাবা আবুল হাশেম বেপারী বলেন, তাদের প্রেমের সম্পর্কের কথা আমার জানা নেই। তবে মুহিন তাদের বাড়িতে এসে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে মুহিনের মা সুরাইয়া বেগম বলেন, ছেলে মুহিনকে রিয়ার বাবা ও ভাইয়েরা মিলে হত্যা করেছে। ঘটনার পর দিন হুমকি দিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই এবং পুলিশকে না জানিয়ে মরদেহ দাফনে বাধ্য করেছে। ছেলে হত্যার বিচার চাই।
দেবিদ্বার থানার ওসি মো. জহিরুল আনোয়ার বলেন, মুহিনের মৃত্যুর খবর কেউ থানায় জানায়নি। জানালে ময়নাতদন্ত করা হতো। এ ঘটনার ব্যাপারে নিহতের পরিবার থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি। আদালত থেকে কোনো নির্দেশনা আসলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।