শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ, ১৪৩১
রিয়াদ মাহমুদ সিকদার, কাউখালী (পিরোজপুর)।।
একযুগ ধরে ঝুকিপূর্ন ভবনেই চলছে কাউখালী উপজেলাবাসীর চিকিৎসা সেবা। ২০০৯ সাল থেকে পড়ে আছে কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন নির্মান ও বর্তমান ভবনের মেরামত কাজ। নির্মান ও মেরামত কাজ শুরুর অনেক আগে ঝুকিপূর্ন ঘোষনা করা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন। সামান্য বৃষ্টিতে ছাদ থেকে পানি পড়া, সিলিং ও বিম থেকে কংক্রিট খসে পড়া, সার্বক্ষনিক প্লাস্টার খসে পড়া নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিনত হয়েছে। অপরদিকে অনিয়ম আর অব্যস্থাপনার কারনে বন্ধ রয়েছে কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করনের কাজ। চিকিৎসক ও কর্মচারীদের আবাসস্থলের অবস্থাও অত্যান্ত করুন। চিকিৎসক সংকট দীর্ঘ দিন ধরে। ওই উপজেলায় উপজেলা ও ৫ টি ইউনিয়ন মিলিয়ে মোট ১৫ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও ওইখানে আছে ৫ জন চিকিৎসক। ঠিকাদারের করা মামলার কারনে নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ করাও সম্ভব হচ্ছে না বলে জানালেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান।
সরেজমিনে ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন কক্ষের ছাদ ও পিলার থেকে কংক্রিট ভেঙে পড়ে একটি ভুতুড়ে ভবনে পরিনত হয়েছে কাঊখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স । ভবনের জরুরী বিভাগ,ল্যারেটরী কক্ষ, আই এম সি আই রুম, রোগী থাকার ওয়ার্ডের অবস্থা খুবই করুন। ওইসব কক্ষে প্রবেশ করতে রোগী, চিকিৎসক ও কর্মচারীরা সন্ত্রস্ত থাকে। ওই কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার কেউন্দিয়া গ্রামের সাথী আক্তার বলেন, এই কিছুক্ষন পূর্বে করিডোরে দাড়িয়ে কথা বলার সময় উপর থেকে মাথার ওপর প্লাস্টারের বালু খসে পড়েছে। এবং রোগীদের নতুন বিছানাসহ আসবাবপত্র নস্ট হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মো. হাবিবুর রহমান বলেন ওই কমপ্লেক্স ভবনের মেরামতসহ ৫০ শয্যায় উন্নীত করনের লক্ষে নতুন ভবন নির্মানের জন্য ২০০৮ সালে মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজ, উত্তর আলেকান্দা, বরিশালকে কার্যাদেশ প্রদান করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। কার্যাদেশ পেয়ে ঠিকাদার মেরামতের কাজ ও ভবন নির্মানের কাজ শুরু করেন। অত্যান্ত নিম্ন মানের মালামাল দিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। ঠিকাদার নিম্ন মানের কাজ জায়েজ করার জন্য তৎকালীন সময়ের এক মন্ত্রীর আত্মিয় পরিচয় দিতেন। ওইসময় এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট দফতরে আপত্তি জানন। প্রকৌশল বিভাগ কাজের মান ভাল না হওয়ায় আপত্তি দিলে ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে দেন। সে থেকে বন্ধ রয়েছে ভবন নির্মান ও মেরামত কাজ।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান আরও জানান, তিনি একছর পূর্বে ওই উপজেলায় যোগদান করেন। ভবনের অবস্থা বর্ননা দেওয়ার কোন অবস্থাই নেই। ভবন নির্মানের কাজ বন্ধ রয়েছে একযুগ ধরে। মেসার্স নূও এন্টারপ্রাইজের অনুকুলে দেওয়া কার্যাদেশ বাতিল করায় তিনি আদালতে মামলা করেছেন। মামলা করায় নতুন করে টেন্ডার দেওয়াও যাচ্ছেনা বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। চিকিৎসক সংকট রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। এখানে ১৫ জন চিকিৎসকের বিপরীতে পাঁচ জন কর্মরত আছেন। এছাড়া একজন পিরোজপুরে আর একজন ঢাকাতে ডেপুটেশনে রয়েছেন। চিকিৎসক ও কর্মচারীদের আবাসিক ভবনগুলোরও একই অবস্থা। জীবনের ঝুকি নিয়ে বাস করতে হচ্ছে তাদের।
পিরোজপুরের সিভিল সার্জন ডা. হাসনাত ইউসুফ জাকি বলেন, নির্মান কাজের টেন্ডার হবে। বর্তমানে কোন অবস্থায় রয়েছে এমন এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন ফাইল মন্ত্রনালয়ে রয়েছে। তিনি বলেন এলাকার সন্তান এক সেনা কর্মকর্তা বিষয়টি দেখছেন বলে তিনি জানান। এর বেশি তিনি কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান।
কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিমান কাজের ঠিকাদার নূর এন্টারপ্রাইজের মালিক নাসির উদ্দিন লিটু জানান, যে সমস্যা ছিল তার অবসান হয়েছে। শীঘ্রই টেন্ডার হবে।