সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
রূপালী স্বাস্থ্য।।
প্লাস্টিকের বোতলে পানি খেলে কিংবা মাইক্রো ওয়েভ ওভেনে খাবার গরম করে খেলে ক্যান্সার হয়। নতুন এক গবেষণায় বলা হচ্ছে ক্যান্সার সম্পর্কে এরকম অনেক ভুল বা অসত্য তথ্য বিশ্বাস করে বসে আছে অনেক মানুষ।
ইংল্যান্ডে চালানো এই গবেষণার ফল ইতোমধ্যেই ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ ক্যান্সারে প্রকাশিত হয়েছে। তবে, এই গবেষণায় অংশ নেয়া ইংল্যান্ডের মোট ১৩৩০ জন খুব সঠিকভাবেই ধূমপানকে ক্যান্সারের কারণ বলে সনাক্ত করেছেন। ধূমপান, স্থুলতা ও আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাবে যেসব ক্যান্সার হয় সেগুলো সবচেয়ে বেশি প্রতিরোধযোগ্য বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ক্যান্সার রিসার্চ প্রতিষ্ঠান জানাচ্ছে, প্রতি দশটি ক্যান্সারের ঘটনার ক্ষেত্রে অন্তত চারটি ঘটনা লাইফস্টাইল বা জীবন যাপনের পদ্ধতি দিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে এ জন্য ক্যান্সারের বিষয়ে সঠিক তথ্য জানাটা জরুরি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন ও ইউনিভার্সিটি অফ লিডস এর গবেষকরা, এই গবেষণার জন্য একটি জরিপ চালিয়েছিলেন। গবেষকরা বলেছেন, জরিপে অংশ নেয়াদের মধ্যে অন্তত ৪০ ভাগ মানুষ ভুলভাবে ‘স্ট্রেস’ বা মানসিক চাপ এবং খাদ্যাভ্যাসকে ক্যান্সারের কারণ বলে মনে করে।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের অন্তত তিন ভাগের এক ভাগ বিশ্বাস করে যে, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফ্রিকোয়েন্সি (৩৫%) এবং জেনেটিকেলি মডিফায়েড (জিএম) খাবার (৩৪%) খেলে ক্যান্সার হবার আশঙ্কা রয়েছে। যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণ না থাকার পরেও, অন্তত ১৯ শতাংশ মনে করে যে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাবার গরম করে খেলে এবং প্লাস্টিকের বোতল থেকে পানি খেলে ক্যান্সার হতে পারে।
জরিপে যারা অংশ নিয়েছেন এর মধ্যে অবশ্য সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ শতকরা ৮৮% ধূমপান এবং ৮০ ভাগ মানুষ পুরো ধূমপান আর ৬০ ভাগ মানুষ ‘সানবার্ন’ বা রোদে পোড়ে ক্যান্সারের কারণ বলে উল্লেখ করেছেন।
গবেষকরা বলেছেন, ব্যাপারটা এমন নয় যে ক্যান্সারের কারণ সম্পর্কে যাদের মনে ভুল ধারণা ছিল তারা অনেক ঝুঁকিপূর্ণভাবে জীবন-যাপন করছিলেন।
বরং গবেষকরা জানাচ্ছেন যে, ক্যান্সারের কারণ সম্পর্কে যারা অনেক সঠিক তথ্য জানে তারা বেশি সচেতন এবং তারা ধূমপান থেকে দূরে থাকে।
কোন প্রমাণাদি না থাকার পরেও বহু মানুষ বিভিন্ন বিষয়কে ক্যান্সারের কারণ হিসেবে মনে করে। এই শতকের শুরুর দিকে অসত্য ও অপ্রমানিত বিষয়গুলোকে যে পরিমাণ মানুষ ক্যান্সারের কারণ হিসেবে মনে করতো, এখন তার থেকেও বেশি মানুষ সেটি মনে করছে। আর এর পেছনে ইন্টারনেটে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য জানাটা একটা বড় কারণ।
তাই, ক্যান্সারের কারণ সম্পর্কে মানুষকে সঠিক তথ্য দিয়ে জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে জনশিক্ষা আরো বাড়ানোর প্রয়োজন। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে গ্যারান্টি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু ক্যান্সারের সবচেয়ে বড় কারণগুলো সম্পর্কে ভুল-ভাল তথ্যের পেছনে সময় ব্যয় না করে সঠিক তথ্য জানলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
ডা: কে.এম. জাহিদুল ইসলাম
এমবিবিএস(ঢাকা), বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এমএস (অর্থোপেডিক সার্জারী) অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল) ঢাকা।