বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ, ১৪৩১
গোলাম কিবরিয়া, বরগুনা।।
করোনা ভাইরাসের কারণে রফতানি বন্ধ থাকায় কাঁকড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উপকূলীয় বরগুনার পাথরঘাটা ও তালতলী উপজেলার চাষিরা। ইতমধ্যে তারা অনেকেই পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হতে চলেছেন। একদিকে লোকসান আর অন্যদিকে ঋণের বোঝায় দিশেহারা হয়ে হতাশার মধ্যে দিন কাটছে তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরগুনার পাথরঘাটা ৪৭০ টি ঘেরে পাঁচ শতাধিক চাষি কাঁকড়া চাষ করেছেন। স্বল্প সময়ে উৎপাদন, চীনে ভালো চাহিদা ও দাম থাকায় উপজেলায় গত কয়েক বছরে কাঁকড়া চাষি যেমন বেড়েছে, তেমনি গড়ে উঠেছে নতুন নতুন কাঁকড়া চাষের ঘের। কিন্তু হঠাৎ চীনে করোনা ভাইরাস ভয়াবহ রূপ নেওয়ায় উৎপাদিত কাঁকড়া রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বরগুনায় মাত্র তিন মাসে পরিপক্ক ও ডিমওয়ালা কাঁকড়াগুলো ঘেরেই মরেছে অধিকাংশ। এদিকে দেশের বাজারে কাঁকড়ার চাহিদা না থাকায় দাম কমেছে কয়েকগুণ। যেখানে কেজি প্রতি কাঁকড়া ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকায় বিক্রি হতো, তা এখন ২শ’ থেকে আড়াইশ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হতে চলেছেন কাঁকড়া চাষিরা। কাঁকড়া চাষিদের প্রত্যেকের আছে ঋণের বোঝা।
কাঁকড়া চাষি মনোতোষ বলেন, এক একটি ঘের করতে আমাদের খরচ হয় দুই লাখ টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। আর এসব টাকারই ব্যবস্থা করা হয় এনজি ঋণ, ব্যাংকের ঋণ অথবা মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়ে। প্রতি বছর মার্চ মাসের মধ্যে সবার দেনা পাওনা পরিশোধ করে দেই। এবার আর কিছুই করতে পারছি না। বড় বড় কাঁকড়া ঘেরেই মরে যাচ্ছে। সরকারি ভাবে সহায়তা না করলে পরিবার পরিজন নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে।
কাঁকড়া চাষি শিমুল মন্ডল বলেন, সময়মতো কাঁকড়া বিক্রি না করতে পারায় সব ঘের নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু কিছু ঘেরের পানি শুকিয়ে গেছে। এবছর করোনা ভাইরাস আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। এরকম অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।
কাঁকড়া আড়তদার সমিতির সভাপতি উত্তম মজুমদার বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে রফতানি বন্ধ থাকায় দাদনের টাকা তো দূরে থাক, চাষিদের পারিশ্রমিকের টাকা উঠানোই দায়। সঠিক সময় তুলে বিক্রি করতে না পারায় অধিকাংশ ঘেরেই কাঁকড়া মওে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, এই মুহূর্তে কাঁকড়া চাষিদের আর্থিক সহায়তা না করা গেলেও যাতে কাঁকড়া গুলো না মারা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু করোনার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় কাঁকড়াগুলো ঘেরেই মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।