শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১
এইচ,এম হুমায়ুন কবির, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)।।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। বেরিয়ে এসেছে মরিচা ধরা লোহার রড। বিমের অবস্থাও খুব খারাপ। বিম ফেটে রড বেরিয়ে রযেছে। এমন ঝুকিঁপুর্ন ভবনে চলছে চিকিৎসাসেবা। এই অবস্থায় রোগীদের পাশাপাশি চিকিৎসকেরাও আতঙ্কে থাকছেন। মহিপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি আসা-যাওয়ার রাস্তাটি বেহাল দশা। রাস্তাটি ইট দিয়ে সলিং করা। আবার অনেক জায়গার ইট ও নাই। বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে থাকে রাস্তাটি। চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগিদের জামা-কাপর হাত দিয়ে জাগিয়ে ধরে আসতে হয়। তা আবার কাঁদা ছিটে জামা-কাপড়ে লেগে নষ্ট হয়ে যায়। রয়েছে পাঁচটি পদ শুন্য।
মহিপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, ৫৬শতাংশ জমি নিয়ে ১৯৫০ সালে মহিপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি প্রতিষ্টিত হয়। প্রথম দিকে টিন সেটের ঘর ছিল। ১৯৯৫ সালে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশলী অধিদপ্তর দ্বিতল ভবনটি নির্মান করে। ভবনটি নির্মানে নি¤œমানের মালামাল ব্যবহার করায় মাত্র ২৬ বছরের মধ্যেই এটি জরাজীর্ন হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে মহিপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র গিয়ে দেখা গেছে, মহিপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি আসা-যাওয়ার রাস্তাটি বেহাল দশা। রাস্তাটি ইট দিয়ে সলিং করা। আবার অনেক জায়গার ইট ও নাই। বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে থাকে রাস্তাটি। চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগিদের জামা-কাপড় হাত দিয়ে জাগিয়ে ধরে আসতে হয়। তা আবার কাঁদা ছিটে জামা-কাপড়ে লেগে যায়। ভবনটি নির্মানে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করায় মাত্র ২৬ বছরের মধ্যেই এটি জরাজীর্ন হয়ে পড়েছে। ভবনের বিভিন্ন অংশের পলেস্তারা খসে পড়েছে। ছাদ ও বারান্দার পিলারগুলোর ঢালাই খসে রড বেরিয়ে পড়েছে। এর পেছনের জানলাগুলো ভাঙ্গাচোড়া। সামনের দড়জা-জানলার একই অবস্থা। বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মালামালসহ ঔষধপত্র। এই জরাজীর্ণ ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে নিভৃত পল্লী গ্রামের সাধারন মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। ভবনটিতে চিকিৎসা সেবা তো দুরের কথা এখন ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রোগীসহ যে কোন মানুষ এবং কর্মীরা ক্লিনিকে গিয়ে থাকেন অজানা শঙ্কায়। সে সাথে রয়েছে জনবল সঙ্কটে।
এ হাসপাতালে কাগজে কলমে এমবিবিএস একজন, মেডিকেল(ফার্মা) একজন, পিয়ন একজন, আয়া একজন, এফ, পি,আই একজন যারা গ্রামে ঔষধ বিতরন করে মোট পাঁচজনের পদ শুন্য রয়েছে। কিন্তু কর্মরত আছেন এফ ডব্লিউবি একজন, নাস একজন, মেডিকেল এসিষ্ঠান-এস,এ,সি,এম,ও একজন। রয়েছে বেড সমস্যা। বেড রয়েছে মাত্র দুইটি। এখানে শুধু নরমাল ডেলিভারী দেয়া হয়। উপকুলীয় মৎস্য বন্দর মহিপুর-আলীপুর জেলে ও গর্ভবতী মা স্বাস্থ্য সেবা পেয়ে থাকে এ স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে। বেশি রোগীর হলে তাদেরকে বেড দেয়া যায় না। ফলে গরিবও অসহায় রোগীরা সরকারি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জরুরি প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে সবচেয়ে বিপাকে পড়ছে গর্ভবর্তী মা ও শিশুরা।
গর্ভবর্তী মায়েদের দুর্ভোগের শেষ নেই। গর্ভধারন থেকে শুরু করে সন্তান জন্মদানের পুরো সময়টাতেই চিকিৎসা নিতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে তাদের। যার কারনে গর্ভবর্তী মহিলারা তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারছেন না। জানতে পারছেন না তাদের করনীয়। এতে ঝুঁকির মধ্যে থাকে মা ও পেটের শিশুচিকিৎসা না পেয়ে সন্তান জন্মদানের সময় নানা জটিলতায় মারা যান অনেক মা ও তার নবজাতক সন্তান। বর্তমানে প্রায় প্রতিনিয়ত সাগরে জলদস্যূদের গুলিতে আহত ও জেলেরা জাল ফেলা নিয়ে বিভিন্ন সময় মারামারি সংঘর্ষ ঘটে থাকে। এমবিবিএস ডাক্তার না থাকায় রোগীরা সঠিক ভাবে চিকিৎসা পাচ্ছেনা। ফলে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এমবিবিএস ডাক্তার না থাকায় রোগীরা জরুরী প্রয়োজনে হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোর চিকিৎসা সেবা না পেয়ে তাদের ২২ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিয়ে কলাপাড়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে। হাসপাতালে এমবিবিএস চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হলেও বিভিন্ন কারন দেখিয়ে তারা সদর হাসপাতালে চলে আসে। জরুরি প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছেনা। সেখানে জেলেরা চিকিৎসাসেবা না পেয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় কলাপাড়া সদরে আসতে হচ্ছে। সাগর পাড়ের হতদড়িদ্র জেলে ও নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ শারীরিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে হাসপতালে চিকিৎসাসেবা নিতে হয়। ডাক্তারসহ জনবল না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা নিতে এসে রোগীরা বিপাকে পড়েছেন। হাসপাতালে বৈদ্যুতিক পাখা থাকলে ও তা ঘুরছেনা। নেই পর্যাপ্ত বাতি। বিদ্যুৎ চলে গেলে কোনো আলো ব্যবস্থা থাকেনা। বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিলে একদিকে যেমন রোগীদের দুর্ভোগ অসহনীয় হয়ে উঠে।
খাজুরা গ্রামের মোসা. কমলা বেগম ও মর্জিনা বেগম নামের দু’নারী পাঁচ মাসের অন্তঃসত্তা করেছেন। এজন্য ডাক্তার দেখাতে আসেন। কিন্তু উপরের দিকে তাকালে ছাদে চোখ পড়লেই আঁতকে উঠেন ওই নারী। কখন ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে, সেই আতঙ্ক। কর্মকর্তা কর্মচারীদের কক্ষের ছাদ ও বিমে ফাটল দেখা যায়। এ ছাড়া ছাদের অনেক স্থানের পলেস্তারা খসে পড়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক নার্স বলেন, শুধূ রোগীদের ওয়ার্ডের ছাদের অবস্থা খারাপ, বিষয়টি তেমন নয়। তাঁদের বসার কক্ষসহ এই ভবনের প্রায় সব কক্ষের এক অবস্থা।
মহিপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র কর্মরত চিকিৎসক ডা. সুবীর কুমার পাল বলেন, অনেক বছর ধরে এমবিবিএস ডাক্তার না থাকায় রোগীরা সঠিক চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। এমবিবিএস ডাক্তার দিলেও কিছু থেকে তারা শহরে চলে যায়। এ সমস্যা কয়েকবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ চিন্ময় হাওলাদার জানান, আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাইছি যে, মহিপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে পাচটি পদ শুন্য রয়েছে ও দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। এমবিবিএস ডাক্তার না থাকায় রোগীরা সঠিক চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। বেড সমস্যা – বেশি রোগীর হলে তাদেরকে বেড দেয়া যায়না।