শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র, ১৪৩০
এইচ এম হুমায়ুন কবির, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)।।
অধিকাংশ টিন মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। চালের ফাঁক দিয়ে উকি দিচ্ছে সুর্য। বৃষ্টি পানি পড়ছে শিক্ষার্থীর গায়ে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে কর্দমাক্ত হয়ে যায়। বৃষ্টি হলে টিনের ফাঁক দিয়ে বৃষ্টি পানি ক্লাসে ঢুকে যায় ও ভিমের বিভিন্ন অংশের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ওয়াল ও বাড়ান্তার পিলার গুলোর ঢালাই খসে রড বেরিয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও পলেস্তারা খসে পড়ছে, বেরিয়ে পড়েছে রড। দরজা-জানলা অনেক রুমে ভেঙে পড়ে রয়েছে। এমন অবস্থায় অনেকটা ঝুঁকির মধ্যেই পাঠদান চলছে কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জরাজীর্ণ টিনের ঘরে পাঠদান। শিক্ষার্থীরা বলছে, বিদ্যালয় এমন পরিস্থিতিতে অনেক সময় জরাজীর্ণ টিনের ঘরে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। জরাজীর্ণ ভবনটি এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছেলে মেয়েদের শিক্ষা উন্নয়নে ১৯৪০ সালে উপজেলা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে ৯৯ শতাংশ জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এটি উপজেলার মধ্যে শীর্ষ ফলাফল ধরে রেখেছে। বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ টিনের ঘরে কয়েক যুগ ধরে তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে চালাচ্ছেন পাঠদান কার্যক্রম। দিন দিন ঝুঁকি আরও বাড়ছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থান সংকুলান হচ্ছে না। বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১০৯ জন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষের ওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। জং ধরা ভিমের রডগুলো বের হয়ে আছে। অনেক স্থানে ওয়ালে ফাটল ধরেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি চুইয়ে পড়ে ভবনের ভেতরে। এতে করে যেমন শঙ্কায় দিন পার করছে শিক্ষার্থীরা, তেমনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় স্কুলের টিনশেডে ক্লাস চালাতে বাধ্য হচ্ছে তারা। পাঠদানকক্ষে পাশে রয়েছে ছোট একটা ভবন। পাশের ভবনে রয়েছে দু’শ্রেনীর পাঠদানকক্ষ ও প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকের কার্যালয়, শিক্ষক মিলনায়তনের এক পার্শে লাইব্রেরি। তাতে জায়গা সংঙ্কটের কারনে জরাজীর্ণ টিনের ঘরে চলছে পাঠদান। নতুন ভবন নির্মানের জায়গা থাকলে ও পাচ্ছেনা নতুন ভবন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থী আলিফ, মাইশা বলেন, জরাজীর্ণ টিনের ঘরে চলছে আমাদের পাঠদান। বৃষ্টি হলে টিনের চালের ফাঁক দিয়ে বৃষ্টি পড়ে আমাদের শরীরে পড়ে । তাতে জামা ,কাপড়, বই খাতা ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। দেওয়াল থেকে প্রতি দিনেই পলেস্তারা খসে পড়ছে আমদের পড়ার টেবিল ও স্যারের চেয়ারে। দরজা-জানলা রুমে ভেঙে পড়ে রয়েছে। সিমেন্ট-বালু খসে পড়ায় ক্লাস করতে তাদের ভয় লাগে। সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকে, কখন মাথার ওপর ধসে পড়ে পলেস্তারা। তারা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করতে বাধ্য হয়। মাঝেমধ্যে ছাদ থেকে ময়লা পড়ে জামাকাপড় নষ্ট হয়ে যায় বলে জানায় ওই শিক্ষার্থী।
নাম না প্রকাশ শর্তে এক শিক্ষক বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে টিনসেট ঘরটির অবস্থা খুবই নাজুক। যেকোনো সময় পুরো টিনসেট ধসে পড়তে পারে। এমন ভয়ের মধ্যেই চলতে হচ্ছে তাঁদের। সব সময় শিক্ষার্থীদের নিয়ে শঙ্কায় থাকতে হয়। এ ছাড়া আবাসন সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুন শাকিব খাঁন কনা বলেন, আমার বিদ্যালয়ে প্রায় ১০৯ শিক্ষার্থী রয়েছে। বর্তমান টিনশেট ঘরের অবস্থা একেবারেই নাজুক। বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। যেকোনো সময় ওয়াল পড়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই দ্রুত একটি নতুন ভবন নির্মান খুবই জরুরি।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অত্যুতানন্দ্র দাস বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয় টিনশেট ঘরটি জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। জীবনের ঝুঁকি, সেই সঙ্গে আবাসন সঙ্কট নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই এই বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো এবং সেই সাথে চাহিদা পাঠানো হয়েছে।