রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ, ১৪৩১
অনলাইন ডেস্ক।।
রাজধানীর বাড্ডার মাদানী অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে এখন মৃত্যুমুখে ছয় বছর বয়সী আয়ান। চিকিৎসকদের অবহেলায় চার দিনেও জ্ঞান ফেরেনি শিশুটির। সর্বশেষ, একই কোম্পানির গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে বর্তমানে লাইফ সাপোর্টে রয়েছে আয়ান। তার জ্ঞান ফেরার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসক। এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় মামলা করেছেন আয়ানের বাবা।
শিশুটির পরিবারের অভিযোগ, খতনার সময় অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার ৩০ মিনিট পর জ্ঞান ফেরার কথা জানান দায়িত্বরত চিকিৎসক। কিন্তু প্রয়োগে ভুলের কারণে শিশুটি এখন মৃত্যুমুখে। এমনকি অভিভাবকদের না জানিয়ে অপারেশন টেবিলে আয়ানকে রেখে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের ঘণ্টাব্যাপী ক্লাস নেওয়া হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ ডিসেম্বর সকালে ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আয়ানকে নিয়ে যান ওর বাবা শামীম আহমেদ। সেখানে তাকে খতনা-পূর্ববর্তী অ্যনেসথেসিয়া দেওয়া হয়। কথা ছিল ৩০ মিনিট পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে আয়ান। কিন্তু চার দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও তার জ্ঞান ফেরেনি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ করেন প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসক সাব্বির আহমেদ। আর সার্জারি করেছেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেহজাবীন।
আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ বলেন, অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগের কিছুক্ষণ পর সার্জারি করার কথা। কিন্তু ওকে অপারেশন টেবিলে রেখে এক থেকে দেড় ঘণ্টা মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেন চিকিৎসক। শেষের দিকে যখন তারা আয়ানের পালস পাচ্ছিলেন না তখন শরীরের দুই পাশে ফুটো করে বুকে ঘন ঘন প্রেসার দেওয়া হচ্ছিল। তখনই আমরা বুঝতে পারি, কিছু একটা ভুল হয়েছে। কিছুক্ষণ পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে গুলশান-২ ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। পরে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ওই হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা টাকার কথা ভাবিনি। ছেলের জন্য যা ভালো তা-ই করতে বলেছি। এ জন্য তারা অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার আগে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করালেও কিছু বলিনি। খতনার সময় ছেলের পাশে থাকতে চাইলেও প্রটোকলের দোহাই দিয়ে রাখা হয়নি। আসলে ক্লাস নেওয়ার জন্যই আমাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি, যা আমাদের অজান্তেই করা হয়েছে, এটি অপরাধ। তারা আমার ছেলেকে ব্যাঙের মতো কেটেছে। চার দিন হলো আমার ছেলেকে তারা পিআইসিইউতে (পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) রেখেছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত ওর জ্ঞান ফেরেনি।
আয়ানের বাবা বলেন, আমরা রিপোর্ট-কাগজপত্রসহ বিএসএমএমইউর একজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছি। এরপর তিনি তাৎক্ষণিক ইউনাইটেড হাসপাতালের কর্তব্যরত অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের সেই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন, এমনকি শিশুটির ক্ষেত্রে ভুল অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার বিষয়টিও স্বীকার করেছেন বলে আমরা জেনেছি। আয়ানের কিছু হলে সব দায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বাইরে আয়ানের মা রত্না অঝোরে কাঁদছেন। এ অবস্থার জন্য হাসপাতাল ও জড়িত চিকিৎসকদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
এদিকে আয়ানের ভুল চিকিৎসা হয়েছে কিনা- সেটি এখনই বলা সম্ভব নয় বলে জানান ইউনাইটেড হাসপাতালের ব্যবস্থাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি খান। বলেন, প্রটোকল মেনেই চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিয়েছেন। কিন্তু কেন এমনটা হলো, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিশুটি এখন ক্রিটিক্যাল পর্যায়ে রয়েছে। তার চিকিৎসায় ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
পরিবারের অনুমতি ছাড়া রোগীকে অপারেশন টেবিলে রেখে ক্লাস নেওয়া কতটা যৌক্তিক?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি, খতিয়ে দেখব। এমনটা হওয়ার কথা না।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অ্যানেসথেসিয়া অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক বলেন, ‘অ্যানেসথেসিয়া দিলে আধা ঘণ্টার মধ্যেই রোগী জ্ঞান ফেরে। কখনো ঘণ্টাও লেগে যায়। কিন্তু তাই বলে চার দিন ধরে এমন অবস্থা এবং রোগীকে লাইফ সাপোর্টে নিতে হয়েছে মানে কিছু একটা হয়েছে। এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। অজ্ঞান করতে ঘুমের যে ওষুধ দেওয়া হয় তাতে প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। ফলে হার্ট বন্ধ হয়ে যায়, তাৎক্ষণিকভাবে ভ্যান্টিলেশনের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে সেটি হয়েছে কিনা দেখতে হবে।
ওষুধ মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগ হলেও অ্যানেসথেসিয়াস্টিস্টের ম্যানেজ করার সক্ষমতা থাকে। সেখানে কেন বাচ্চাটার এমন হলো বুঝতে পারছি না। শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হয় বলেও জানান তিনি।