শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ, ১৪৩১
গৌরনদী প্রতিনিধি (বরিশাল)।।
আর মাত্র তিনদিন পরেই ঈদ-উল-আযহা। কোরবানির ঈদ মানেই পশু জবাই। আর পশু জবাই করতে দরকার দা, বঠি, ছুরি, চাকু, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। তাই গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী এসব জিনিসপত্র বানাতে আগুনে পোড়ানো নরম লোহায় হাতুড়ি পেটানো টুং টাং শব্দে দিন ও রাতে সমান ব্যস্ত সময় পার করছেন গৌরনদীর কামার শিল্পীরা।
বিভিন্ন বাজার ও কামারপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, লাল আগুনের লোহায় পিটুনিতে সরগরম হয়ে উঠেছে কামারের দোকানগুলো।
তবে এবছর লোহা আর কয়লার দাম বেশি হলেও সেই তুলনায় বেশি মজুরি নিতে পারছেন না তারা। তাই এবছর বেশি লাভের আশা করছেন না কামার পাড়ার দোকানিরা। বর্তমানে ভালো মানের প্রতিটি দা তৈরিতে মজুরি নেয়া হচ্ছে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। চাকু তৈরিতে নেয়া হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, বড় ছুরি তৈরিতে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং বঠি তৈরিতে মজুরি নেয়া হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
কোরবানির দিন যত ঘনিয়ে আসছে কাজের ব্যস্ততা ততই বাড়ছে। অধিক পরিশ্রম হলেও বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এই সময়ে বাড়তি রোজগারের আশায় পথ চেয়ে থাকেন কামারপাড়ার শিল্পীরা। লোহা ও কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় কোরবানির অপরিহার্য এসব জিনিসপত্রের দামও এবার বেড়েছে বলে জানিয়েছে টরকী বন্দরের কামার শিল্পী মহাদেব কর্মকার, সমির কর্মকার ।
মনোজ কর্মকার জানান, এখন ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড়। কামারদের কেউ ব্যস্ত নতুন দা-বঠি তৈরিতে, আবার কেউ ব্যস্ত পুরনো দা, বঠি, ছুরি, চাপাতিতে শান দিতে। তবে নতুন কাজের চেয়ে গৃহস্থদের কাছে পশু জবাইয়ের জন্য পুরানো গুলোতেই শান দিতে বেশি ঝুঁকছেন ক্রেতারা। এজন্য গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক দিয়ে আগে থেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লোক রেখেছেন তারা।
সরেজমিনে গৌরনদী উপজেলা সদর বাজার, টরকী বন্দর, বার্থী বাজার, ইল্লা বাজার, মাহিলাড়া, বাটাজোর, সরিকল, ভুরঘাটাসহ বিভিন্ন হাট বাজারে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দা, বঠি, চাকু, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করছে কামাররা।
শান দেয়া নতুন দা, বঠি, ছুরি ও চাকু সাজিয়ে রাখা হয়েছে দোকানের সামনে। দোকানের জ্বলন্ত আগুনের তাপে কামার শিল্পীদের শরীর থেকে ঝড়ছে অবিরাম ঘাম। চোখে মুখে প্রচন্ড ক্লান্তির ছাপ। তবুও তারা থেমে নেই। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে তাদের কাজের ব্যস্ততা।
ব্যবহার্য্য জিনিস স্থানীয় চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকারি ব্যবসায়ীরা নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। মৌসুমী ব্যবসার জন্য পশুর মাংস বানিয়ে বাড়তি রোজগার করতে কসাইরা অনেকেই নতুন জিনিসপত্র বানাচ্ছেন। কামারপাড়ার এই ব্যস্ততা থাকবে কোরবানির দিন পর্যন্ত।