শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
আমির হোসেন, চরফ্যাশন (ভোলা)।।
চরফ্যাশনে ঔষধের দোকান মালিকরা এমআরপি (মার্কেট রিটেল প্রাইজ) সিন্ডিকেট করে ক্রেতাদের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যে ঔষধ বিক্রির নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কমিশন না দিয়ে নামিদামি কোম্পানী ছাড়াও অখ্যাত, ভেজাল ও নিন্মমানের ঔষধের গায়ে লেখা মূল্যে কিনতে বাধ্য করছে ক্রেতাদের। করোনা কালীন সময় চরফ্যাশনে বৃদ্ধি পেয়েছে ঔষাধ ফার্মেসী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চরফ্যাশন বাজারে ঔষধের দোকান রয়েছে ১শত ১০ টি। সকল দোকান মালিক মিলে গঠন করেছেন চরফ্যাশন উপজেলা কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতি। যার সভাপতি রয়েছেন বাচ্চু মিয়া ও সাধারন সম্পাদক পিআই জালাল আহম্মেদ। সমিতি গত দু’বছর পুর্বে সম্মেলনের মাধ্যেমে এক দরের এমআরপি মূল্যে সকল ফার্মেসীতে ঔষধ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। কোন দোকান মালিক এ আইন ভঙ্গ করলে অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। ইতিপূর্বে অসংখ্য দোকান মালিককে দন্ডিত করেছেন সমিতির নেতৃবৃন্দ। সমিতির এমন মনগড়া সিদ্ধান্তে ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করে দোকান মালিকরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যায়।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, নামমাত্র পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করে, ড্রাগ লাইসেন্স ব্যতীত অসংখ্য মালিক ঔষধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। অধিকাংশ ফার্মেসিতে হরহামেশাই বিক্রি হচ্ছে আয়ুর্বেদিক, ভেজাল, নিম্নমানের বা নামসর্বস্ব কোম্পানির ঔষধ। যা ক্রয় করা হয়েছে শতকরা ৫০ থেকে ৬০ পারসেন্ট মূল্য কমে। কিন্তু ক্রেতাদের কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে এমআরপি অর্থাৎ ঔষধের গায়ে লেখা মূল্যে। ভেজাল ঔষধ চেনার জন্য একটি ফার্মেসি দোকান মালিকের শরণাপন্ন হয়ে ছিলাম। স্কয়ার কোম্পানির সেকলো! ঔষধের বক্স, পাতা, ঔষধ, কোম্পানি নাম ও মুল্য হুবহু একই। শুধুমাত্র ক্যাপসুলটি ভাঙার পর দেখা যায়, ভেতরের দানা বা পাউডার গুলো দু’টা দুই রংয়ের। যা সাধারণ ক্রেতাদের চেনার প্রশ্নই উঠে না।
চরফ্যাশন পৌর শহরের সদর রোড, থানা রোড, হাসপাতাল রোড, দুলারহাট, শশীভূষণ, দক্ষিণ আইচা থানা সদরে করোনা কালীন অর্ধশতাধিক ঔষাধ ফার্মেসীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঔষাধ বিক্রেতাগন ক্যামিস্ট সনদ ছাড়াই শিক্ষাগত যোগ্যতাবিহীণ ঔষুধ বিক্রি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঔষধ ক্রেতা পৌরসভা ৬নং ওয়ার্ডের স্কুল শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা ও মা কিডনি, ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগী। পরিবারে প্রতি মাসে প্রায় ৫ হাজার টাকার ঔষধ লাগে। আগে কিছু টাকা ছাড় পেয়ে সাশ্রয় হতো। কিন্তুু এ ভাবে এমআরপিতে ঔষধ বিক্রি করে ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। আমরা চরফ্যাশন কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির এমন কালো আইনের প্রতি নিন্দা জানাই। সাথে সাথে উক্ত আইন বাতিল এবং ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ বিক্রি বন্ধে চরফ্যাশন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
তথ্য হিসাবে দেখা যায়, চরফ্যাশন ফার্মেসিগুলোতে এক রেট এমআরপি বাণিজ্যে যদি দোকান প্রতি দৈনিক মাত্র ২শ টাকা অতিরিক্ত হাতিয়ে নেয় তাহলে ২২ হাজার টাকা, মাসে হবে ৬ লাখ ৬০ হাজার, আর বছরে দাঁড়ায় ৭ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। শতকরা ১০০% ঔষধ ক্রেতাদের দাবি, চরফ্যাশন উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে এক রেটে এমআরপি বাণিজ্য বন্ধ করে, সাধারণ ক্রেতাদের ঔষধ ক্রয় ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া দাবী জানানো হয়।
চরফ্যাশন কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি বাচ্চু মিয়া মুঠোফোনে এমআরপি বাণিজ্য সম্পর্কে বলেন, কোম্পানীগুলো আমাদের সীমিত লাভ দিচ্ছে এ থেকে ক্রেতাদের কিছু ছেড়ে দিলে ব্যবসায় বিভিন্ন খরচ করে টিকে থাকা যায়না। তিনি আরো বলেন, দেশেতো কত আইন আছে বাস্তবে কি কার্যকর হয়? কারো সাথে সম্পর্ক থাকলে দোকান মালিকরা একটু ছাড় দিয়েই বিক্রি করে। পূর্বে অসংখ্য দোকান মালিক কে এমআরপি থেকে কমিশন বাদ দিয়ে বিক্রি করার অপরাধে অর্থদন্ড দিয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আচ্ছা ভাই বিকালে দোকানে চা খেতে আসেন তারপর না হয় কথা বলব।
এই ব্যপারে চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, ঔষধ বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসনের নিয়ম রয়েছে। ড্রাগ লাইসেন্স ও ট্রেড লাইসেন্স করে বিধিমোতবেক ঔষাধ বিক্রি করবে। সেন্ডিকেট সৃষ্টি করে ব্যবসা করার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।