শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
মো. নাঈম মিয়াজী, মতলব (চাঁদপুর)।।
বৃষ্টি ও বন্যার পানির চাপে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের মূল বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে এর ১০-১২টি স্থানে বড় বড় ছিদ্র এবং কমপক্ষে ৪০টি স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থান মেরামতের চেষ্টা করছেন স্থানীয় লোকজন ও প্রশাসন। পাউবো বেড়িবাঁধ রক্ষা কাজ করছেন। চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এ্যাড. নুরুল আমিন রুহুল, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জাতীয় পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এমএ কুদ্দুস এবং পাউবো’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৃহস্পতিবার ওই সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধ ঘুরে দেখা যায়, সুগন্ধি, শিকিরচর, ষাটনল, এর গালিমখাঁ বাজার, কালীপুর, বাগানবাড়ি, ধনাগোদা, তালতলী, এনায়েতনগর, ফরাজীকান্দি, রায়েরকান্দি, নবীপুর, লালপুর ও গোপালকান্দি এলাকায় গর্ত ও বড় বড় ছিদ্রের সৃষ্টি হয়েছে।
শিকিরচর-সুগন্ধি এলাকায় বোরোপীটের সাথে বাঁধে সামান্য ধস দেখা দিলে সাথে সাথে বালুর বস্তা ফেলে রক্ষার জন্য কাজ করে স্থানীয়রা। বৃহস্পতিবার দুপুরে পরিদর্শনে আসেন চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এ্যাড. নুরুল আমিন রুহুল। তিনি ষাটনল মালোয়পাড়া ও বাঁধের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করে বাঁধ রক্ষা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। বাঁধ রক্ষার জন্য সবার কাছে সহযোগিতা চান।
পাউবোর চাঁদপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মতলব উত্তর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ৬০ কিলোমিটারে ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে অর্থায়ন করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার। এই বাঁধের ভেতরে প্রায় ৩২ হাজার ১১০ একর ফসলি জমি আছে। নির্মাণের পর এ পর্যন্ত দুবার বেড়িবাঁধটি ভেঙে যায়। এতে কয়েক শ’ কোটি টাকার ফসল ও সম্পদের ক্ষতি হয়। বাঁধের প্রায় অর্ধেক অংশে পিচঢালাই সড়ক এবং বাকি অর্ধেকে কাঁচা রাস্তা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তালতলী এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেন, বর্ষা শুরুর পর থেকে টানা বৃষ্টি ও নদীর পানির চাপে মূল বাঁধের বিভিন্ন অংশে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেগুলো মেরামতে দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি পাউবো কর্তৃপক্ষ। সময়মতো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এসব গর্ত ও ছিদ্র ক্রমশ বড় হয়েছে। বাঁধও পড়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে। আতঙ্কে রয়েছেন বাঁধের ভেতরের পাঁচ লাখ বাসিন্দা।
ফরাজীকান্দি এলাকার কৃষক হাতেম আলী বলেন, আমার এলাকায় বেড়িবাঁধ ভাইঙ্গা ভাইঙ্গা পড়লেও হেগুলি ঠিক করণের কেউ নাই। বাঁধ ভাইঙ্গা গেলে সব ফসল তলাইয়া যাইব। তহন আমাগো পথে বসন লাগব।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবস্থাপনা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ কুদ্দুস বলেন, বাঁধের ভাঙন ঠেকাতে এলাকার লোকজন রাত-দিন পাহারা দিচ্ছেন। কোথাও নতুন করে গর্ত বা ছিদ্রের সৃষ্টি হলে সেটি মেরামতের জন্য এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। বাঁধের ভিতরে বসবাসকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। যেখানেই সমস্যা দেখা দিবে সাথে সাথে আমাদের জানালে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।