শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১
রূপালী স্বাস্থ্য।।
টেলবোনের প্রান্তে ব্যথা হলে তাকে সাধারণত ডাক্তারি পরিভাষায় কক্সিডায়ানিয়া বলে। শিরদাঁড়ার শেষ অংশটিকে টেলবোন বলে। ত্রিভুজাকার দেখতে এই টেলবোন চারটি ছোট ছোট হাড়ের সংযোজনে তৈরি। যখন আমরা কোনও কিছুর উপরে বসি, তখন শরীরের অনেকটা ওজনই বহন করে কক্সিস বা টেলবোন। এই কক্সিসের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে একাধিক লিগামেন্ট ঠিক এই নির্দিষ্ট অংশটিতে ব্যথা হলে তখন তাকে বলা হয় কক্সিডায়ানিয়া।
টেলবোনের ব্যথার কারণ: এটি সাধারণত কোনো প্রাইমারি ইনজুরির দ্বিতীয় ধাপ। গর্ভাবস্থায়, শরীরের অতিরিক্ত ওজনের কারণেও হতে পারে আবার কোনো কারণ ছাড়াই লিগামেন্টের অ্যালাইনমেন্টও কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে যায়। পরবর্তীকালে কোনও ছোটখাটো আঘাতেই কক্সিডায়ানিয়া হতে পারে। আবার খুব শক্ত জায়গায় শোয়া, অনেকক্ষণ এক জায়গায় কক্সিসের উপরে চাপ দিয়ে বসে থাকা ইত্যাদিও এর কারণ হতে পারে। আবার ইনফেকশনের কারণেও হতে পারে।
কিভাবে সনাক্ত হয় টেলবোনের ব্যথা: এ ব্যথা বুঝার জন্য চিকিৎসক ফিজিক্যালি পরীক্ষা করবেন, রোগীর মেডিকেল হিস্ট্রি নিবেন। কোনো কোনো চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা করে জানার চেষ্টা করবেন যে এটি সায়াটিকা, হাড় অথবা টিস্যুর অসামানঞ্জস্যতার জন্য হচ্ছে কিনা। এ ধরনের ব্যথা আপনা থেকেই কমতে থাকে। তবে ওই জায়গায় যদি আর কোনও কারণে আঘাত লাগে তাহলে হঠাৎ করে ব্যথা শুরু হতে পারে। আবার যদি পড়ে গিয়ে কক্সিসে ব্যথা পান, তাহলেও কক্সিডায়ানিয়া হতে পারে। শিরদাঁড়ায় ইনফেকশন, কক্সিস সংলগ্ন অংশে কোনও সার্জারিও এর কারণ হতে পারে।
চিকিৎসা: টেলবোনের ব্যথার চিকিৎসা রোগী ভেদে ভিন্ন। ফিজিক্যাল থেরাপি একটি উপায় বটে। এতে টেলবোন সন্নিহিত মাংসপেশীকে শিথিল করে দেয়। ব্যথার ওষুধও খাওয়া যেতে পারে। অস্বাভাবিক ক্ষেত্রে সার্জারি করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। যারা টেলবোনের ব্যথায় আক্রান্ত তাদের অনেকক্ষণ এবং শক্ত স্থানে বসে না থাকা ভালো। যখন ব্যথা হবে তখন কক্সিসে গরম সেঁক নিলে ভাল।
কুশনের উপর বসার চেষ্টা করবেন। বাজারে রিং কুশন বা এয়ার কুশন পাওয়া যায়। এগুলো নির্দিষ্টভাবে কক্সিডায়ানিয়া রোগীদের জন্যই তৈরি। যদি নাও পান, যে কোনও নরম কুশনের উপর বসবেন। মাথায় রাখবেন, ওই জায়গায় যাতে চাপ না পড়ে। পাবলিক ভেহিকলে যাতায়াত করলে পা আড়াআড়ি করে বসুন, যাতে কক্সিসের উপর যতটা সম্ভব চাপ এড়ানো যায়। সঙ্গে শিরদাঁড়ার এক্সারসাইজ জরুরি। এই নিয়মগুলো মেনে চলার সঙ্গে সঙ্গে পেনকিলারও খেতে পারেন। তবে এগুলো করেও যদি তিনসপ্তাহ পরে ব্যথা থাকে, তাহলে অবশ্যই অর্থোপেডিক ডাক্তার দেখাবেন। অনেকের আবার দু’তিন সপ্তাহ পরেও অল্পস্বল্প ব্যথা থেকেই যায়।
ডা: কে.এম. জাহিদুল ইসলাম
এমবিবিএস(ঢাকা), বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এমএস (অর্থোপেডিক সার্জারী) অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল) ঢাকা।