শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ, ১৪৩১
অনলাইন ডেস্ক।।
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেই কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থেকেও চালিয়ে যাচ্ছেন দাফন-কাফন কার্যক্রম। করোনার শুরু থেকেই করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গে নিহত হওয়াদের দাফন-কাফনে এগিয়ে এসে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে এখন পরিচিত মুখ তিনি। ইতোমধ্যে তার টিম দাফন ও সৎকার করেছে ৬৫টি মরদেহ।
এসব সেবা দিতে গিয়ে শনিবার (৩০ মে) নিজেও করোনায় আক্রান্ত হন খোরশেদ। এর আগে গত ২৩ মে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনা। এদিকে তার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে গেলে শনিবার দিনগত রাতে তাকে কাঁচপুরের সাজেদা ফাউন্ডেশনে ভর্তি করান খোরশেদ। পরে সেখান থেকে ৩১ মে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে সস্ত্রীক ভর্তি হন তিনি। তবে এসময়ের মধ্যেও চারটি মরদেহ দাফন করিয়েছেন তার টিম মেম্বারদের দিয়ে।
সোমবার (১ জুন) স্কয়ার হাসপাতালে খোরশেদ ও তার স্ত্রী চিকিৎসাধীন। তাদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তা, সরকারি দপ্তর, সংস্থা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সংসদ সদস্য, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শুভানুধ্যায়ীরা তাদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। পাশে দাঁড়ান স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানও। তিনিও নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছেন।
এর মধ্যে হাসপাতালে থেকেই সোমবার সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরের উত্তর পাড়ার এক করোনা পজিটিভ রোগী মারা যাওয়া ব্যক্তির দাফন করান তিনি। তার টিমের আশরাফুজ্জামান হিরা, হাফেজ শিব্বির, আনোয়ার, লিটন হাওলাদার, রাফি, শফিউল্লাহ প্রমুখ এতে অংশ নেন।
স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালের পথে খোরশেদএর আগে রোববার হাসপাতালে নিজের স্ত্রীকে ভর্তি করিয়ে পাশে থেকে নির্দেশনা দিয়ে ৬২তম দাফন গাজীপুরে, ৬৩তম দাফন নারায়ণগঞ্জের আমলাপাড়ায় ও ৬৪তম দাফন সিদ্ধিরগঞ্জের ১ নম্বর ওয়ার্ডে সম্পন্ন করান।
তার টিম মেম্বাররা জানান, তিনি আমাদের পাশে এখন নেই, তবে আমরা সবার কাছে তার সুস্থতার জন্য দোয়া করি। তিনি থাকলে কাজের গতি ও মনোবল থাকে অন্যরকম। তার উৎসাহ ও প্রেরণায় অন্যরকম সাহস পাই। তবে তিনি এখনো আমাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন এবং আমরা সে অনুযায়ী দাফন-কাফন ও সৎকারের কার্যক্রমসহ তার সব কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। তার নির্দেশনায় সব কার্যক্রম চলবে, আশা করছি দ্রুত তিনি সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।
খোরশেদ নিজের উদ্যোগে করোনার শুরু থেকেই তার ওয়ার্ডের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সঙ্কট হওয়ার পর নিজে হাজার হাজার বোতল তৈরি করে বিতরণ করেন, ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেন।
কবর দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতাকরোনায় আক্রান্তদের দাফন পাশাপাশি সৎকার কাজেও অংশ নিচ্ছেন। এলাকার সড়ক ও ঘরে জীবাণুনাশক স্প্রে করছেন, যানবাহন জীবাণুমুক্ত করতে স্প্রে অব্যাহত রেখেছেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইন ও মাইকে ঘরে ঘরে দোয়ার ব্যবস্থা করেছেন, মানুষকে সচেতন করতে নিয়মিত প্রতি এলাকায় মাইকিং করাচ্ছেন, নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে টিম গঠন করে এলাকায় এলাকায় আড্ডা বন্ধ করতে অনুরোধ করছেন এবং তার ওয়ার্ডবাসীর স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে টেলি মেডিসিনসেবা চালু করেছেন তিনি।
এছাড়া শুধু তার ওয়ার্ড নয়, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের মরদেহ দাফনে কেউ এগিয়ে না এলেই তিনি ও তার স্বেচ্ছাসেবক টিম এগিয়ে আসছেন। তার ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় তিনি বিনামূল্যে সবজি বিতরণ কার্যক্রমও শুরু করেছেন এবং এটি ঈদের পরও অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের নিজ খরচে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের রক্তের প্লাজমা সংগ্রহ করছেন। করোনার শুরু থেকেই তার ওয়ার্ডের নিম্নআয়ের কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে তার টিমের। -বাংলানিউজ