সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
ধর্ম ও জীবন।।
ঘর নিজের হোক কিংবা অন্যের; তাতে প্রবেশের আগে রয়েছে কিছু নিয়ম, আমল এবং দোয়া। ঘরে প্রবেশের সময় সালাম, দোয়া, জিকির-আজকার ও আমল মূলত কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশ। ঘরে প্রবেশে নিয়ম মানলে, হাদিসে বর্ণিত আমল ও দোয়া করলে মিলবে অসামান্য কল্যাণ ও উপকারিতা।
নিজ ঘর কিংবা বাড়িতে প্রবেশের নিয়ম, আমল ও দোয়া গুলো সবার জন্যই জরুরি। এতে ঘরের মানুষ যেমন নিরাপদ থাকে, তেমনি শয়তানের আক্রমণ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। ঘরে প্রবেশ করার সময় ঘরে অবস্থানকারীদের সালাম দেয়ার নির্দেশ এসেছে কুরআনে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘অতপর যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ কর, তখন (ঘরে অবস্থানকারী) তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এটা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্যে আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ননা করেন, যাতে তোমরা বুঝে নাও।’ (সুরা নুর : আয়াত ৬১)
এ আয়াতে ঘরে প্রবেশের আগে ঘরে অবস্থানকারীদের সালাম দেয়াকে কল্যাণ লাভের মাধ্যম এবং দোয়া হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। যার বিনিময়ে মহান আল্লাহ দান করবেন রহমত ও অনুগ্রহ।
ঘরে প্রবেশের দোয়া: কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী ঘরে প্রবেশের সুন্নাত আমলসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো- সালাম দেয়া, দোয়া পড়া, জিকির-আজকার করা, এবং মেসওয়াক করা। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী বাড়িতে প্রবেশের সময় এ দোয়া পড়া-
بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا، وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا، وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا
উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি ওয়ালাঝনা; ওয়া বিসমিল্লাহি খারাঝনা; ওয়া আলাল্লাহি রাব্বিনা তাওয়াক্কালনা।’
অর্থ : ‘আল্লাহ্র নামে আমরা (ঘরে) প্রবেশ করলাম, আল্লাহর নামেই আমরা (ঘর থেকে) বের হলাম এবং আমাদের রব আল্লাহ্র উপরই আমরা ভরসা করলাম।’ অতপর ঘরের লোকদের সালাম দিয়ে প্রবেশ করা।’ (আবু দাউদ)
ঘরে প্রবেশে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া: ঘরে প্রবেশে দোয়ার পাশাপাশি জিকির-আজকার তথা আল্লাহকে স্মরণ করা। আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করলে তিনি মানুষকে শয়তানের কুপ্ররোচনা ও আক্রমণ থেকে হেফাজত করেন। এ সম্পর্কে হাদিসের নির্দেশনা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘যখন তোমাদের কেউ ঘরে প্রবেশ করে, আর প্রবেশের সময় ও খাবারের সময় আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন শয়তান (নিজ সঙ্গীদের ডেকে) বলে, তোমাদের কোনো বাসস্থান নেই, তোমাদের রাতের কোনো খাবারও নেই।’ (মুসলিম)
ঘরে প্রবেশের পর আমল: ঘরে প্রবেশের অন্যতম আমল হলো- মেসওয়াক করা। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোথাও থেকে ফিরে আসলে, ঘরে প্রবেশের পর মেসওয়াক করতেন। হাদিসে এসেছে- হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে প্রবেশের পর সর্ব প্রথম মেসওয়াক করতেন।’ (মুসলিম)
এ হাদিসের আলোকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, বাহির থেকে ঘরে ফিরলে পরিবার-পরিজনের সুস্থতা ও স্বাচ্ছন্দ্য লাভের ক্ষেত্রে প্রথমেই নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নেয়া জরুরি। মুখের দুর্গন্ধ ও পরিচ্ছন্নতায় মেসওয়াক করা উচিত। তাতে হাদিসের উপর যেমন আমল হবে, তেমনি বাহিরের রোগ-বালাই এবং জীবাণু ও অপরিচ্ছন্নতা থেকে মুক্তি পাবে নিজের পরিবার। আর কুরআন-সুন্নাহর অনুসরণ ও অনুকরণে রহমত ও কল্যাণ লাভ করবে মুমিন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিজ ঘরে প্রবেশের ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নায় বর্ণিত দোয়া, জিকির ও আমল যথাযথভাবে করার তাওফিক দিন। দুনিয়ায় যাবতীয় রোগ-বালাই, অসুস্থতা ও মন্দ কাজ থেকে নিরাপত্তা ও সুস্থতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।