শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ, ১৪৩১
প্রবাস ডেস্ক।।
বগুড়া সোনাতলা উপজেলার নাসিমা খাতুন (৩৭) সৌদি আরব গেছেন তিন বছর হলো। সেখানে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছেন তিনি। দেশটিতে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত নবায়ন করা তার শ্রমিক ভিসার মেয়াদ রয়েছে। হঠাৎ পরিবারের কাছে খবর এলো নাসিমা সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। একদিন পর তাৎক্ষণিকভাবে তার লাশের দাফনও সম্পন্ন করা হয়েছে। এই খবরের পর থেকে বন্ধ নাসিমার মুঠোফোন নম্বর। তিন ভাইয়ের এক বোন নাসিমার এমন মৃত্যুর খবরে দিশেহারা হয়ে ওঠেন দুবাই প্রবাসী ভাই মিলন মিয়া। ছুটে যান দুবাইস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে। আমিরাত ও সৌদি আরব দুই দেশের কূটনৈতিক তৎপরতায় রোববার (১৮ এপ্রিল) ১২দিন পর জীবিত উদ্ধার হয় সৌদি প্রবাসী নাসিমা খাতুন।
নাসিমার পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৭ এপ্রিল বুধবার সৌদি আরবের একটি নম্বর থেকে হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে নাসিমা খাতুনের মৃতদেহের ছবি আসে পরিবারের কাছে। যেখানে জানানো হয়- সৌদি আরবে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় নাসিমার মৃত্যু হয়েছে। একই দুর্ঘটনায় নিয়োগকর্তার স্ত্রী ও সন্তানও মারা গেছেন। পরের দিন বৃহস্পতিবার তাৎক্ষণিক তার দাফনও সম্পন্ন করা হয়। বোনের শোক সামাল দিতে না পেরে সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী ভাই মিলন মিয়া যোগাযোগ করেন দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটে। কনস্যুলেটের প্রথম সচিব (শ্রম) ফকির মনোয়ার হোসেন বিষয়টি আমলে নিয়ে সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাসে অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস তদন্ত শুরু করে। নাসিমার লাশ দাফনের পূর্বে ‘এনওসি’ নেওয়ার নথিপথ অনুর্ভূক্ত না থাকায় নিয়োগকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে দূতাবাস। এরপর নাটকীয়ভাবে নিয়োগকর্তার মাধ্যমে ১২ দিন পর জীবিত উদ্ধার হন সৌদি প্রবাসী এই নারী। তবে এই ১২ দিন তিনি কোথায় কী অবস্থায় ছিলেন তা জানা যায়নি।
নাসিমার ভাই শারজা প্রবাসী মিলন মিয়া বলেন, প্রতিমাসে নাসিমা দেশে টাকা পাঠায়। চলতি মাসের ৩ তারিখও সে দেশে টাকা পাঠিয়েছে। কিন্তু ৭ এপ্রিল অপ্রত্যাশিতভাবে তার মৃত্যুর খবর আসে। আমরা তিন ভাই। আমাদের অনুমতি ছাড়াই বোনের দাফন হয়ে গেছে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটে গিয়ে বিষয়টি অবগত করি। কনস্যুলেট কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় আমরা বোনকে জীবিত ফিরে পেয়েছি।
দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটের প্রথম সচিব (শ্রম) ফকির মনোয়ার হোসেন বলেন, গত ১৩ এপ্রিল মিলন মিয়া তার বোনের মৃত্যুর খবর নিয়ে কনস্যুলেটে আসেন। অভিযোগ করেন- তাদের না জানিয়ে সৌদিতে বোনের দাফন হয়ে গেছে। তার বোন নাসিমা যেহেতু সৌদি আরব প্রবাসী, সেই হিসেবে সৌদি বাংলাদেশ দূতাবাসে আমরা যোগাযোগ করি। দূতাবাসের নথিপত্রে নাসিমার মৃত্যুর কোনো তথ্য না থাকায় পরে তার নিয়োগকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে আরও তদন্ত করা হয়। যোগাযোগ করা হয় ঢাকায় নাসিমাকে সৌদি প্রেরণকৃত এজেন্সির সঙ্গে। নাসিমাকে কেউ অপহরণ করেছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা হয়। অবশেষে রোববার দূতাবাস ও নিয়োগকর্তার যৌথ প্রচেষ্টায় তাকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়।