শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ, ১৪৩১
-বিপ্লব গোস্বামী
প্রতিদিনের মত সেদিনও স্কুল শুরু হতেই শর্মা স্যার ক্লাসে এলেন। রোলকলের পর যথারীতি ক্লাস শুরু করলেন। আমরা সবাই মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছি।
এমন সময় স্যার বললেন, “পিয়ালী তোমার মনোযোগ কোথায়? সবাই মনযোগ সহকারে ক্লাস করছে আর তুমি জানলা দিকে কি দেখছ ?” পিয়ালী দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে রইল।
স্যার বললেন , “পিয়ালী আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি তোমাকে, উত্তর দাও।
“পিয়ালী কাম্পিত কন্ঠে উত্তর দিল, “স্যার বাইরে একদল পিঁপড়া লাইন ধরে যাচ্ছে আমি তাই দেখছিলাম।
“স্যার বললেন, “আচ্ছা তাই,কই আমাকেও দেখাও। “পিয়ালী উৎসাহিত হয়ে দেখাল ঐ দেখুন স্যার।
স্যার বললেন ,”সবাই দেখ পিঁপড়েরা কিভাবে লাইন ধরে চলছে।” তোমাদের তো আমি অনেক বলেও ঠিকমতো লাইন ধরাতে পারি না। দেখ পিঁপড়েরা কত সুন্দর লাইন ধরে চলেছে। স্যার আরো বললেন তোমাদের পিঁপড়া থেকে শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছু আছে। চল আজ আমি তোমাদের পিঁপড়া সম্পর্কে কিছু বলব। এই বলে স্যার বলতে লাগলেন।
পিঁপড়া হল এক প্রকার প্রতঙ্গ বা পোকা বা কীট।পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই পিঁপড়া দেখতে পাওয়া যায়।পিঁপড়া খুব শৃংঙ্খলাপরায়ন।ওদের মধ্যে দলবদ্ধতা ও দূরদর্শিতা লক্ষ করা যায়।ওরা খুব পরিশ্রমী ও পরোপকারি।তাছাড়া ওদের মধ্যে নিয়মানুবর্তিতাও লক্ষ্য করা যায়।ওদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিক্ষা নেওয়ার আছে।
শৃঙ্খলাবোধ : পিঁপড়ের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ খুব বেশি।তারা শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে লাইন ধরে চলাফেরা করে।পিঁপড়ার দল সবসময় সমান্তরাল ভাবে চলে।কোন কোন সময় ওরা হয়তো খাদ্য সংগ্ৰহের জন্য এলোমেলো ছুটে , নয়তো সব সময়ই তারা লাইন ধরে চলাফেরা করে।ওদের কাছ থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে যে আমরাও সব সময় শৃংখলাবদ্ধ ভাবে চলাফেরা কবর।কারণ শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনই সফলতা অর্জন করতে পারে।
দলবদ্ধতা : পিঁপড়েরা সব সময় দলবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করে।ওদের মধ্যে একাত্মতাবোধ খুব বেশি।
পিঁপড়েদের দল নেতা হলো রাণী পিঁপড়া।রাণী পিঁপড়াকে মেনে চলে সবাই।রাণি পিঁপড়ার কথা মতোই ওরা সব সময় দলবদ্ধ হয়ে চলে।এক জনের বিপদে অন্য জন এগিয়ে আসে।ওদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে যে আমরাও সব সময় দলবদ্ধ হয়ে থাকত।কারণ দলবদ্ধ ভাবে কাজ করলে কঠিন কাজ বা অসাধ্য কাজও সম্ভব করা যায়।কথায় আছে দশের লাঠি একের বুঝা।
দূরদর্শিতা : পিঁপড়ারা খুব দূরদর্শী।ওরা শীত কালের জন্য খাবার সঞ্চয় করে রাখে।শীতকালে ঠাণ্ডার জন্য তারা চলাফেরা করতে পারে না।তাই সারা বছর ধরে শীতকালের জন্য খাদ্য সঞ্চয় করে রাখে।আমাদে পিঁপড়া থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।আমরাও যদি আমাদের অনিশ্চিত কথা চিন্তা করে ভবিষ্যতে জন্য যথা সাধ্য সঞ্চয় করো,তাহলে আমরাও নিশ্চিত ভাবে উপকৃত হবো।
পরিশ্রমী : ক্ষুদ্র প্রাণী পিঁপড়া খুব অক্লান্ত পরিশ্রমী।পিঁপড়া তাদের দেহের ওজনের বিশ গুণ বেশী ওজন বহন করতে পারে।আমরাও যদি আমাদের অলসতাকে ত্যাগ করে পরিশ্রমী হই তবে নিশ্চিত ভাবে জীবনে উন্নতি করতে পারব।
পরোপকারিতা: পিঁপড়েকে যদি অন্য কোন প্রাণী বা মানুষ আঘাত করলে বা কোন বিপদ সংকেত পেলে মুহূর্তের মধ্যে ওরা একে অন্যকে জানিয়ে দেয়।সঙ্গে সঙ্গে ওরা দল ভেঙে ছুটে পালায়।একজন অসুস্থ হলে অন্য পিঁপড়েরা ওকে বহন করে গর্তে নিয়ে যায়।ওদের মতো করে সেবা যত্ন করে।ওদের মধ্যে রয়েছে আন্তরিক প্রেম প্রীতি ও একে অন্যের মধ্যে খুব ভালোবাসা।তাছাড়া ওরা এক জনে যতটা সম্ভব খাদ্য সংগ্ৰহ করে কিন্তু সবাই মিলে খায়।পিঁপড়াড় কাছ থেকে আমরা পরোপকারিতার শিক্ষা নিতে পারি।আমরাদেও একজনের বিপদে অন্য জন এগিয়ে যাওয়া দরকার।
নিয়মানুবর্তিতা : পিঁপড়া সব সময় নিয়মের কাজ নিয়মে কেরে থাকে।ওরা সব সময় ব্যস্ত থাকে।ওদের প্রত্যেকের কাজ ভাগ করা থাকে।ওরা নিয়ম মেনেই শীত
কালের জন্য খাদ্য গ্ৰীষ্ম কালেই সঞ্চয় করে রাখে। ওদের কাছ থেকে আমরাদের নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষা নেওয়া উচিত। আমরাদেরও নিয়মের কাজ সব সময় নিয়মেই করে হবে।তবেই আমরা জীবনে উন্নতি করতে পারব।