শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ, ১৪৩১
রূপালী স্বাস্থ্য।।
যেসব নারীর পিরিয়ড দেরিতে হয় তারা খুবই চিন্তায় পড়ে যান। আর যাদের নিয়মিত এই সমস্যা হয় তাদের জন্য তো কথাই নেই। অনেকেই অনাকাঙ্খিত গর্ভ ধারণের দুশ্চিন্তায় পরে যান। তাহলে করণীয় কি? এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ডা: কে.এম. জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেছেন,অনাকাঙ্খিত গর্ভ ধারণ ছাড়াও দেরিতে পিরিয়ড হওয়ার অনেকগুলি কারণ রয়েছে । এ ছাড়া প্রেগনেন্সির ২য় ত্রৈমাসিক কালীন সময়ে ( ৪মাস থেকে ৬ মাস) একজন মায়ের সচেতনতা সম্পর্কেও পরামর্শ দিয়েছেন এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।
পিরিয়ড সমস্যা:
১. দুশ্চিন্তাঃ দুশ্চিন্তা বা অবসাদ পিরিয়ডকে প্রভাবিত করে, দেরিতে হওয়া বা মাসিক মিস হতে পারে দুশ্চিন্তার কারণে। অনেক নারীর ক্ষেত্রে মাসিকের সময় তীব্র ব্যথাও হয়ে থাকে। নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং যথেষ্ট ঘুমানোর অভ্যাস চাপ কমানো এবং মাসিক চক্র স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। যদি একজন নারী দীর্ঘস্থায়ী চাপের সম্মুখীন হয়, তবে তাকে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে হতে পারে, যা কার্যকর ব্যবস্থা চিহ্নিত করতে সহায়তা করতে পারে।
২. পেরিমেনোপউজঃ মনোপজের ৪৫-৫০ বছর বয়সের সময় যখন একজন মহিলার কমপক্ষে ১২ মাসের জন্য কোনও পিরিয়ড হয়না। অনেক মহিলারই মনোপজের ১০ থেকে ১৫ বছর আগে থেকে লক্ষণগুলি প্রকাশ পেতে থাকে। একে পেরিমেনোপউজ বলা হয় এবং এটি রক্তে ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন এর মাত্রা কম বেশি হওয়া নির্দেশ করে।
৩. ওজন হ্রাসঃ উল্লেখযোগ্য ওজন হ্রাস বা তীব্র ব্যায়াম একজন নারীকে তার পিরিয়ড এর সময় মিস করাতে পারে। কম ওজনযুক্ত হওয়া বা শরীরের চর্র্বি কম অনুপাত থাকায় প্রজনন হরমোন এর মাত্রা পরিবর্তন হতে পারে, তাদের মাত্রা কম হলেও ওভুলেশন এবং ঋতু পাত ঘটবে না।
৪. স্থূলতাঃ স্থূলতা এবং অনুপস্থিত সময়সীমার মাঝে এমন একটি সংকেত হতে পারে যে একজন মহিলার পলিসিস্টিক ডিম্বাশয় সিন্ড্রোম এর মতো একটি মেডিক্যাল অবস্থা আছে, যা একজন মহিলার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে নির্ণয় করা এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
৫. জন্ম নিয়ন্ত্রণঃ সাধারণত, হরমোনের জন্মনিয়ন্ত্রণ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে, নির্দিষ্ট কিছু দিনের জন্য প্রজেসটেরন এর সাথে মিলিত ইস্ট্রোজেনের একটি ফর্ম প্রদান করে ফলে কিছু হরমোন-মুক্ত দিন আসে। এ হরমোন মুক্ত সময়ে ট্রিগার করে পিরিয়ড হওয়াকে। কখনও কখনও, এই হরমোনটি এতটাই পাতলা আস্তরণ তৈরি রাখে যে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পিরিয়ড এর জন্য পর্যাপ্ততা থাকেনা। এটি হরমোনের ব্যাপার টি জন্ম নিয়ন্ত্রণের সমস্ত প্রকারের পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেমন পিল, ইনজেকশন, ইমপ্লান্ট এবং রিং।
৬. হরমোনাল কন্ডিশনঃ কিছু হরমোন, যেমন প্রলাকটিন বা থাইরয়েড হরমোন, যা তার পিরিয়ড মিস করাতে পারে। রক্ত পরীক্ষা করার মাধ্যমে এটি সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন মোতাবেক এই পরীক্ষাগুলি করানো প্রয়োজন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব।
৭. পলিসিস্টিক ডিম্বাশয় সিন্ড্রোম (পি সি ও এস): পি সি ও এস হল জন্মনিয়ন্ত্রণের মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হরমোন রোগ। অনিয়মিত বা এমনকি অনুপস্থিত সময়সীমা এই অবস্থার একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। রক্তে হরমোনের পরিমাণ পরীক্ষা করার মাধ্যমে ডাক্তার এই অসুখ সহজেই নির্ণয় করে থাকেন এবং মেটফরমিন নামক এক ধরণের ওষুধ প্রেসক্রাইব করে থাকেন।
৮. গর্ভধারণঃ মিসড পিরিয়ড এর অন্যতম কারণ হল গর্ভধারণ, এক্ষেত্রে প্রথমেই প্রেগনেনসি টেস্ট করে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। কোন জন্ম নিরোধন ই শতকরা ১০০ ভাগ সুরক্ষা দেয় না। বাসায় কিট দিয়ে টেস্ট করে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। তাই আপনার যদি ২ মাস বা তার অধিক মাসিক বন্ধ থাকে তো দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। সঠিক চিকিৎসা নিন, সুস্থ থাকুন।
দ্বিতীয়ত: প্রেগনেনসির ২য় ত্রৈমাসিককালীন গুরত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরামর্শ
প্রেগনেনসি বা গর্ভ ধারণ একটি স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। গর্ভ ধারণ কালীন পুরো সময়টিকে আমরা ৩টি ভাগে বিভক্ত করে থাকি। ২য় ত্রৈমাসিক কালীন সময়ে ( ৪মাস থেকে ৬ মাস) একজন মায়ের বাড়তি সচেতনতা ও সতর্কতা জরুরি।
প্রেগনেন্সির ২য় ত্রৈমাসিক কালীন কিছু গুরুত্বপূর্ণ শরীরবৃত্তীয় পরিবর্তনঃ
পেটের নিচের অংশ বড় ও ভারী অনুভব হওয়া। মাথা ঝিম ঝিম করা। ১ম ত্রৈমাসিক কালীন বমি বমি ভাব ও মাথা ঘুরানো কমে আসা। মাথায় এক ধরণের হালকা অনুভূতি হওয়া (রক্তচাপ কমার কারণে)। ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া। ওজন বেড়ে যাওয়া। পেট, স্তন, উরু বা নিতম্ভের উপরের দিকে প্রসারণ চিহ্ন দেখা দেয় হাত-পা ফুলে যাওয়া। ত্বকের পরিবর্তন- স্তনের চারপাশের ত্বকের রং গাড় হয়ে যেতে পারে।
লক্ষণীয় বিষয়- আপনি অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন যদি এই লক্ষণগুলো দেখা যায়ঃ ১.মাথা ঘুরানো ও সাথে বমি ভাব ২.চোখ ও ত্বকে হলুদ ভাব ৩.দ্রুত শরীরের ওজন অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া ৪.হঠাৎ মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্তপাত ও চাকা যাওয়া শুরু করলে।
# প্রেগনেনসির ২য় ত্রৈমাসিক কালীন বাচ্চার শারীরিক বিবর্ধন- ২য় ত্রৈমাসিক কালীন বাচ্চার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি চলতে থাকে, বাচ্চা শুনতে ও গিলতে আরম্ভ করে। সামান্য চুল দেখা যায়। ২য় ত্রৈমাসিকের প্রায় শেষের দিকে বাচ্চা নড়াচড়া করতে আরম্ভ করে, এসময় মায়েরা বাচ্চার ঘুমিয়ে থাকা ও জেগে ওঠার চক্র অনুভব করতে পারে। আমেরিকান প্রেগনেনসি অ্যাসোসিয়েশন এর মতে, ২য় ত্রৈমাসিকের শেষের দিকে বাচ্চার উচ্চতা প্রায় ১৪ইঞ্চি এবং ওজন ২ পাউন্ড এর থেকে কিছু বেশি হয়।
ডাক্তারের কাছে গিয়ে করণীয়- এ সময় ২ সপ্তাহ অন্তর নিম্নলিখিত চেকআপ করা উচিত- রক্ত চাপ ও ওজন পরিমাপ রক্তে সুগারের পরিমাণ চেক করা আলট্রাসনোগ্রাফি জন্মগত ক্রুটি ও জেনেটিক স্ক্রিনিং অ্যামনিও সেন্টেসিস এ সময় বাচ্চার লিঙ্গ নির্ধারণ আলট্রাসনগ্রাফির মাধ্যমে করা যায়।
২য় ত্রৈমাসিককালীন গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরামর্শ: ১/ ভিটামিন, মিনারেল ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার অব্যাহত রাখুন ২/ প্রেগনেনসির ব্যায়াম অব্যাহত রাখুন ৩/ পর্যাপ্ত পানি পান করুন ৪ দাঁত ও মুখ পরিষ্কার রাখুন (অপরিষ্কার দাঁত ও মুখ প্রি ম্যাচিউর লেবার এর জন্য দায়ী) ৫/ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে ৬/ ন্যূনতম ১০ ঘন্টা ঘুমান ৭/ বাচ্চার নড়াচড়া খেয়াল রাখুন।