শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ, ১৪৩১
অনলাইন ডেস্ক।।
৫ প্রতিবন্ধী ছেলেসহ পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৮ জন। ঘর মাত্র একটি। সুস্থ একমাত্র ছেলেকে পড়ালেখা ও বাড়ি ছাড়তে হয়েছে সংসার চালানোর জন্য। বাকি ৫ প্রতিবন্ধী ছেলেকে একঘরে রেখে বাইরে বারান্দায় ঘুমাতে হয় বাবা-মাকে।
করুণ এই দৃশ্যের দেখা মিলেছে দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার ৪ নম্বর আটগাওঁ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের লোহাগাওঁ গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর মোজাম্মেল হকের বাড়িতে।
মোজাম্মেল হকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে খড়ের ছাউনি দিয়ে ঘেরা টিনের তৈরি একটি মাত্র ঘর তার। সেই ঘরের ভেতরে দুটি বিছানায় গাদাগাদি করে শুয়ে বসে আছেন ৫ প্রতিবন্ধী ছেলে বিপ্লব (২০), ইশাদ (১৮), রাজু (১২), রিয়াদ (৮) ও আকতারুল (৬)। তাদের বাবা-মা থাকেন বারান্দায় একটি চৌকিতে।
অপরদিকে এসএসসি পাস করে বাবাকে সহযোগিতার জন্য বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় গার্মেন্টে চাকরি নিয়েছেন বড় সন্তান।
বাবা মোজাম্মেল হক দিনমজুরের কাজ করেন। আর মা বিউটি বেগমের দিন কাটে প্রতিবন্ধী ৫ সন্তানের পরিচর্যায়।
মোজাম্মেল হকের ৬ ছেলের মধ্যে ৪ জন বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী ও একজন বাকপ্রতিবন্ধী। একমাত্র সুস্থ ছেলে ঢাকায় থাকেন।
দিনমজুর মোজাম্মেল হক (৫৫) বলেন, অসহনীয় কষ্টের সংসার তার। সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে। ৮ সদস্য বিশিষ্ট পরিবারে থাকার জন্য মাত্র ১টি শোয়ার ঘর। সেই ঘরে ছেলেরা থাকে। আমি ও আমার স্ত্রী কি শীত, কি বর্ষা, বারান্দায় থাকি।
‘ছেলেরা প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে। কিছুটা রক্ষা। আগে তিন বেলা খেতে দিতে পারতাম না। এখন ডাল ভাত খায়। তবুও যেন অভাব দূর হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, নিজস্ব সম্পদ বলতে ৫ শতাংশ জমির ওপর একটি কুড়েঘর ছাড়া কিছুই নেই। টাকার অভাবে বাড়ি করতে পারেন না। অর্থের অভাবে একমাত্র সুস্থ ছেলেকে ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টে কাজ করতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার চাওয়া সরকারিভাবে আমাকে একটি বাড়ি করে দিলে আমি সন্তানগুলোকে নিয়ে নিরাপদে বসবাস করতে পারি।
মোজাম্মেল হকের স্ত্রী বিউটি বেগম (৪০) বলেন, প্রতিবন্ধী সন্তানগুলোকে নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। অনেক সময় তাদের জন্য আমার বাবা-মাসহ প্রতিবেশীদের কাছে হাত পাততে হয়।
‘আমি তো মা, যেমনই হোক আমি তাদেরকে পেটে ধরেছি। শত কষ্টেও তাদের মুখে যখন হাসি দেখি তখন কষ্টগুলো ভুলে যাই।’
তিনি বলেন, আমার স্বামীর ৫ শতাংশ জমি আছে। সরকার যদি এই জমির উপর একটা বাড়ি করে দেয় তাহলে সন্তানগুলোকে নিয়ে বাঁচতে পারি।
এ ব্যাপারে বোচাগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. পিয়ারুল ইসলাম জানান, আমার নজরে আসার পর তার তিন ছেলেকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দিয়েছি। আর দুই ছেলে আগে থেকেই ভাতা পেত।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সমাজসেবার পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধীদের জন্য সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্থা আছে। মোজাম্মেল হক ব্যবসা করতে চাইলে আমি তা ব্যবস্থা করে দিতে পারব।