শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১
গোলাম কিবরিয়া, বরগুনা।।
দলীয় প্রার্থী বাছাই করে কেন্দ্রে পাঠানোর শেষ দিন ছিল বুধবার। কিন্তু শেষ দিনেও বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বাছাই প্রার্থীদের তালিকা কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে পাঠাতে পারেনি উপজেলা আওয়ামী লীগ। স্থানীয় সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমনের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও জবরদস্তির কারণে এখনো পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন উপজেলার নেতারা। এমনকি বর্ধিত সভায় লোকজন নিয়ে উপস্থিত হয়ে সবার সামনে আওয়ামী লীগের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাবির হোসেনকে লাঞ্ছিত করিয়েছেন বলেও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, পাথরঘাটা উপজেলার চারটি ইউনিয়নে মনোনয়নের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য গত সোমবার সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠকে বসে উপজেলা আওয়ামী লীগ। দলীয় নির্দেশনা অনুসরণ করে তৃণমূলের মতামতে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য ওই সভায় আলোচনা হয়। ওই সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে লাঞ্ছিত করার একটি ভিডিও এই প্রতিবেদকের কাছে এসেছে।
এতে দেখা যায়, নেতা-কর্মীদের সামনেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আকন মোহাম্মদ শহীদ বারবার সাধারণ সম্পাদক জাবির হোসেনের দিকে তেড়ে আসেন। উপস্থিত নেতা-কর্মীরা নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও আকন শহীদ জাবির হোসেনকে মারতে উদ্ধত হন। এ সময় এমপি রিমন সামনের চেয়ারে বসে ছিলেন।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাবির হোসেন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের নির্দেশনা অনুসরণ করে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য গত সোমবার বিকেলে পাথরঘাটা উপজেলার সদর, চরদুয়ানী, রায়হানপুর ও নাচনাপাড়া—এই চার ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে বৈঠকে বসি। ওই বৈঠকে বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন তাঁর অনুসারীদের নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়,তিনজনের নাম আমরা সুপারিশ করে জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমন্বয় করে কেন্দ্রে পাঠাব। কিন্তু সাংসদ রিমনের পক্ষ থেকে আপত্তি ওঠে এবং তাঁর পছন্দের প্রার্থীর নাম ক্রমিকের ১ নম্বরে রেখে ওখানে বসেই তালিকা করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও এমপি রিমনের ঘনিষ্ঠ অনুসারী আকন মোহাম্মদ শহীদ আমাকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন। পরে কোনোরকম সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ করতে বাধ্য হই। এরপরও তৃণমূলের মতামত নিয়ে প্রার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করি। কিন্তু রিমন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকদের ওই তালিকায় সই দিতে নিষেধ করেন। এমনকি অনেককে ফোন করে হুমকি ও লোক পাঠিয়ে ভয় দেখান। এ কারণে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনেও আমরা প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারিনি। সবশেষে বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের জানানোর পর জেলায় বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেখানেও আজ তিনি লোকজন নিয়ে উপস্থিত হয়ে বৈঠকে অংশগ্রহণের কথা জানিয়েছেন।
জাবির আরো বলেন, বিতর্কিতরা এলাকায় সাংসদ রিমনের অনুসারী। এরা নিজেদের পিঠ বাঁচাতে এখন আওয়ামী লীগের এমপি রিমনের আশ্রয়ে আমাদের অপদস্থ করতেও দ্বিধা করে না। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার ও দুঃখজনক। আমার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, তা পরিকল্পিত ও এমপি রিমনের প্রত্যক্ষ মদদেই হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান পাল্টা অভিযোগ এনে বলেন, ‘বিধিবহির্ভূতভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই মনোনয়নের জন্য সুপারিশ করে তালিকা তৈরি করেছেন। এ নিয়ে প্রার্থী ও তাদের লোকজন ক্ষুব্ধ হওয়ায় বর্ধিত সভায় তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। এটা আওয়ামী লীগের ইন্টারনাল বিষয়। তবে আমার অনুসারী দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে লাঞ্ছিত করিয়েছি—এমন অভিযোগ সত্য নয়।’
চাপ প্রয়োগ ও তৃণমূল নেতাদের ভয়ভীতি দেখানো প্রসঙ্গে সাংসদ রিমন বলেন, তৃণমূলের নেতারাই তো প্রার্থী বাছাই নিয়ে উপজেলার বিরুদ্ধে জেলা আওয়ামী লীগের কাছে অভিযোগ করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভায় সহসভাপতি হিসেবে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এটা কোনো প্রকার চাপ সৃষ্টি নয়।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ে জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা ও বিধিমালা দেওয়া আছে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সাংসদের হস্তক্ষেপ ও চাপের বিষয়ে উপজেলা লিখিত অভিযোগ করলে আমরা সেটি কেন্দ্রে পাঠাব।