শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ, ১৪৩১
গোলাম কিবরিয়া, বরগুনা।।
পালিত বাবা আনোয়ার (৬৫) নামে তার ধর্ষণের শিকার চৌদ্দ বছরের এক কিশোরী নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে ২৭ এপ্রিল বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় আছেন। বেশ কয়েক বছর আগে মেয়েটির বাবা-মার সাথে বিচ্ছেদ হলে সন্তানাদিসহ হতদরিদ্র মেয়ের মা বাচ্চাদের কিভাবে ভরন-পোষনের যোগান দেবে তা নিয়ে দোটানায় পড়ে যায়। তখনই নিঃসন্তান দম্পতি আনোয়ার ও তার স্ত্রীর কাছে মেয়েটিকে পালতে দেয়। মেয়ের পরিচয়ে আনোয়ার মেয়েটিকে প্রতিনিয়তই ধর্ষণ করেছে মেয়েটি ভয়ে মুখ খুলতে না পেরে এখন নয় মাসের বাচ্চা তার পেটে।
এ ঘটনায় গত ১ ফেব্রুয়ারি আনোয়ার-লায়লা দম্পতিকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেন শিশুটির নানি। ওইদিনই আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়।
আনোয়ার বরগুনা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। চাকরির সুবাদে স্ত্রী লায়লা এবং পালিত ওই শিশুকন্যাকে নিয়ে তিনি ঢাকায় বসবাস করতেন।
শিশুটির নানি বলেন, অভাবের কারনে (শিশুটির মা) সৌদি আরব গেছিল। নয় মাস আগে মোর মাইয়া দ্যাশে আইয়া মোরা নাতিরে ঢাকা দিয়া বরগুনার লইয়া আইছিল। তহনই মোর নাতির যে গর্ভ, মোরা বোজতে পারছিলাম।
তিনি আরো বলেন, ওর ভবিষ্যত কী অইবে? কুম্মে রাকপে? কেমনে পালবে এই বাচ্চা? কেডা ওরে খাওন-পরনের দায় নেবে? কিচ্ছু ভাইব্বা পাইতেছি না।’
নির্যাতিত শিশুটির ভাই জানান, বিষয়টি জানার পর তারা মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এরপর পড়েন আরেক ঝামেলায়।
তিনি বলেন, ‘মোরা খুব গরিব। হেইয়ার লইগ্যাই ওরে (ছোট বোনরে) আনোয়ার ও লায়লার দারে পালতে দেতে রাজি অইছিলাম।
মোগো কোনো খেমতা নাই। আদালতে মামলা করছি, খরচাপাতি চালাইতে পারতেছি না। মামলাডা করছি ক্যান, হেইতে এহন উল্ডা হেরা মোগো ধাবায় ধমকায়’-নিজেদের আর্থিক দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে বলেন কিশোরীটির ভাই।
বরগুনা সদর হাসপাতালের নারী ওয়ার্ডের ইনচার্জ লাইজু আক্তার বলেন, ‘সন্তান প্রসবের জন্য শিশুটিকে গত ২৭ এপ্রিল বরগুনার সদর হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে ওর সন্তান প্রসবের তারিখ ৯ মে উল্লেখ করা হয়েছে। শিশুটি এখন পর্যন্ত সুস্থ এবং স্বাভাবিক আছে। আমরা প্রথমে স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবের চেষ্টা করব। কিন্তু তা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে সিজার করা হবে।’
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানায় কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূরে জান্নাত কেয়া বলেন, বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলায় আনোয়ার হোসেনকে ও ধর্ষণে সহযোগিতা করার জন্য তার স্ত্রী মোর্সেদা বেগম লায়লাকে আসামি করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই আমরা আনোয়ারকে গ্রেপ্তার করেছি। তিনি আরও বলেন, ওই শিশুটি সন্তান প্রসব করলে সেই সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। তারপর এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে। এরপর মামলার বিচার কাজ শুরু হবে।