বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র, ১৪৩০
গোলাম কিবরিয়া, বরগুনা।।
বরগুনার আমতলী উপজেলায় বনভূমি ধ্বংসে’র প্রতিযোগিতায় মেতেছে স্থানীয় প্রভাবশালী ইটভাটা মালিকরা। তারা নিজের আখের গোছাতে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বন উজাড়ের এ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছেন। এতে একদিকে পরিবেশ অন্যদিকে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কাঠ পোড়ানো কালো ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে ভুগছে স্থানীয় বৃদ্ধ ও কোমলমতি শিশুরা।
জানা যায়, বরগুনার আমতলীতে আইন অমান্য করে উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তালুকদার বাজার রিপন তালুকদার,কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালা চৌরাস্তা থেকে উত্তর পাশে আনোয়ার হোসেন,
কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালা এলাকার নুরজামাল,কুকুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের খাকদান এলাকার মধু প্যাদা,আমতলী সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড এর মহিষ ডাঙা গ্রামে সোবহান কাজী মোট ছয়টি অবৈধ ড্রাম চিমনি ইটভাটা। এসব ইটভাটা ঘনবসতি এলাকার ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করে ইট পোড়ানোর কাজ অব্যাহত রেখেছে। প্রশাসন মাঝে মধ্যে দায়সারা অভিযান পরিচালনা করলেও পুনরায় ম্যানেজ করে কাজ করছে তারা।
রায়বালা এলাকার বাসিন্দা ছত্তার সিকদার বলেন, এই ইটভাটার চাইরপাশে ধানখেত। বর্ষা মৌসুমে এই ইটভার্টার ময়লা আবর্জনা নেমে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাছাড়া কাঠ দিয়ে ইট পোড়ায়, ‘ধোঁয়ায় কালো হয়ে উঠেছে চারদিক। শ্বাস কষ্ট ও হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত এলাকার বৃদ্ধ ও শিশু। এছাড়াও এর ধোঁয়ায় এলাকার গাছপালাও মারা গেছে।
ইটভাটা মালিক আনোয়ার বলেন, স্থানীয় সাংসদ ও আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে কথা বলে,’তাদের অনুমতি নিয়ে আমরা ইট পোড়ানোর কাজ শুরু করেছি।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯২ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন ও ২০০১ সালের (সংশোধিত) ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী আবাদি জমি ও ঘনবসতি এলাকায় ইটভাটা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে বরগুনা জেলার প্রসাশনকে ম্যানেজ করেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গড়ে উঠেছে এসব ইটভাটা।
অধিকাংশ ভাটায় ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনি নেই। ভাটাগুলোর বেশিরভাগই ড্রাম চিমনি ব্যবহার করে স্থাপিত হয়েছে ফসলি জমি ও ঘনবসতি এলাকায়। লোকালয়ে অবস্থিত হওয়ায় এবং ব্যারেল চিমনি ব্যবহার করায় ওই সব এলাকার পরিবেশ দুষণ হচ্ছে। অনেকে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন।
ইটভাটা মালিকদের সূত্রে জানা যায়, নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভাটায় ইট পোড়ানোর মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। সাধারণত এক চিমনির একটি ভাটায় এক মৌসুমে ২৭ থেকে ২৮ লাখ ইট তৈরি হয়। আর এই ড্রাম চিমনির ভাটায় এক মৌসুমে ৫০ লাখ পর্যন্ত ইট তৈরি করা সম্ভব । এক লাখ ইট তৈরিতে কাঠ লাগে দুই হাজার মণ। সেই হিসেব অনুযায়ী উপজেলার ইটভাটাগুলোতে কোটি কোটি মণ কাঠ পোড়ানো হয়। তবে প্রকৃত হিসেব এর চেয়ে অনেক বেশি বলে জানা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইটভাটা মালিক জানান, বেশিরভাগ ইট ভাটারই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই।
ছাড়পত্র ছাড়াই পরিবেশ অধিদপ্তর ম্যানেজ করে, ‘এক বছরে সীমিত সংখ্যক ইট পোড়ানোর অনুমতি নিয়ে ইট পোড়ানোর কাজ করছেন তারা।
ইটভাটায় কাঠপোড়ানো প্রসঙ্গে বরগুনা বরগুনা জেলা বন কর্মকর্তা মো. মতিয়ার রহমান বলেন, তারা যদী এলাকা থেকে কাঠ ক্রয় করে, ‘তাদের ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহার করে সেক্ষেত্রে আমার কি করার!
অবৈধ ইটভাটা প্রসঙ্গে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ বিন রশিদের কাছে জানতে চাইলে ,গত তিনদিন ধরে বিভিন্ন লোকদের দিয়ে মুঠোফোনটি রিসিভ করান! এছাড়াও নিজেকে ব্যস্ত দেখিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন না এই ইউএনও আবদুল্লাহ বিন রশীদ।