শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ, ১৪৩১
অনলাইন ডেস্ক।।
বরিশালের বাবুগঞ্জে ঢাক-ঢোলসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সাপে কাটা এক তরুণীর চিকিৎসা করছিলেন কথিত কবিরাজ ও তার দল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে দল নিয়ে পালিয়ে যান তিনি। পরে পুলিশ অসুস্থ তরুণীকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
বুধবার (০৯ জুন) রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের আগরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
কথিত কবিরাজ মো. আলী আকবর হোসেন (৩৫) মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ রমজানপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার দলের সদস্যরা হলেন- দক্ষিণ রমজানপুর গ্রামের মো. তফেল, মো. হাফিজুল, মো. বাপ্পি, মো. হানিফ ও মো. শাজাহান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার দিবাগত রাতে ওই তরুণীকে সাপ বা বিষাক্ত কোনো পোকা কামড় দেয়। এতে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ওই রাতেই তাকে কবিরাজ মো. আলী আকবর হোসেনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ঝাড়ফুঁক শেষে আবার বাড়ি ফিরে যান।
ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে মঙ্গলবার (০৮ জুন) তরুণীর স্বজনরা গিয়ে কবিরাজ মো. আলী আকবর হোসেনকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। ওই দিন বেলা ১১টার দিকে বাড়ির উঠানে শামিয়ানা টাঙানো হয়। কলা গাছের সামনে মোমবাতি, আগরবাতি ও ধূপ জ্বলানো হয়। ঘেরাও দেয়া সীমানার মধ্যে একটি চেয়ারে বসানো হয় তরুণীকে। এরপর শুরু হয় ‘আধ্যাত্মিক’ চিকিৎসা।
কিছুক্ষণ পর পর ঢাক-ঢোলসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মন্ত্র পড়ে তরুণী ও কলাগাছকে ঝাড়ফুঁক করতে থাকেন কবিরাজ। এভাবে মঙ্গলবার গড়িয়ে চলে বুধবার।
জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম তারেক বিষয়টি জানতে পেরে বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ নিয়ে আসেন। এ সময় পুলিশ দেখে দল নিয়ে পালিয়ে যান কবিরাজ।
এদিকে, সাপে কাটা রোগীর অদ্ভুত এই চিকিৎসার খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের এলাকার হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমে ওই বাড়িতে।
তরুণীর স্বজনরা জানান, মঙ্গলবার সকালে কবিরাজ মো. আলী আকবর হোসেনকে জানালে তিনি বাড়িতে এসে ঝাড়ফুঁক করেন। জানান তাকে বিষধর সাপে কামড়েছে শুধু ঝাড়ফুঁকে নয় লাগবে ‘আধ্যাত্মিক’ চিকিৎসা। এ জন্য তরুণীর বাবার কাছ থেকে ৪৫ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে তার সঙ্গে ৩৭ হাজার টাকার চুক্তি হয়।
শর্ত অনুযায়ী, কবিরাজের সঙ্গে ছয় সদস্যের দল রোগীর বাড়িতে থাকবে, খাওয়াদাওয়া করবে। বাদ্য-বাজনার তালে তালে মন্ত্র পড়ে ‘আধ্যাত্মিক’ চিকিৎসা দেয়া হবে। এসময় খাবার, ডেকোরেশনসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা ও এর ব্যয় রোগীর অভিভাবককে বহন করতে হবে। তিন, পাঁচ বা সাত দিনের মধ্যে তরুণীকে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলার গ্যারান্টিও দেন কবিরাজ মো. আলী আকবর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার সকালে তরুণীর বাবা জানান, এই কবিরাজ এমন অনেক রোগী এর আগেও ভালো করেছেন বলে তিনি শুনেছিলেন। আগে তার গ্রামের দুজন ও পাশের গ্রামের একজন এই কবিরাজের চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছে বলে তিনি জেনেছেন। তার গ্রামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি যোগাযোগ করেন। এরপর কবিরাজের সঙ্গে তার ৩৭ হাজার টাকার চুক্তি হয়েছিল। চুক্তির ৩৭ হাজার টাকা চিকিৎসার আগেই নিয়ে নেন কবিরাজ।
তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত কবিরাজের চিকিৎসায় তার মেয়ের শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটেনি। তবে কবিরাজ পালিয়ে গেলে বুধবার রাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসার পর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে চিকিৎসকদের অনুমতি নিয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। তার মেয়ে এখন পুরোপুরি সুস্থ।
জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম তারেক বলেন, ‘সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার নামে যা করা হচ্ছিল তা চিকিৎসা নয়, ভণ্ডামি চলছিল। গ্রামের মানুষ খুব সহজে এসব কবিরাজের কথায় বিশ্বাস করে প্রতারিত হচ্ছে।’
আগরপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (আইসি) পরিদর্শক মহিদুল আলম বলেন, চেয়ারম্যানের খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়। কিন্তু তার আগেই কথিত কবিরাজ তার দল নিয়ে পালিয়ে যায়।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সাপে কাটা রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। বিষধর সাপের কামড়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যুর মূল কারণ যথাযথ সচেতনতার অভাব। সাপে কাটা ব্যক্তিকে প্রথমে আশ্বস্ত করতে হবে যে তার ভয়ের কোনো কারণ নেই। এর বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা আছে। বেশির ভাগ সাপই নির্বিষ, এমনকি বিষধর সাপের পক্ষেও দংশনের সময় সব সময় প্রচুর পরিমাণ বিষ ঢেলে দেয়া সম্ভব হয় না। এ জন্য আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাহস দেয়া প্রয়োজন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাসপাতালে দ্রুত নিতে হবে।’ স