শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
কুলিয়ারচর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি।।
কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলা সদরে যাওয়ার মূল সড়কে অবস্থিত এই আজব বেইলি ব্রিজটি। বেইলি ব্রিজটি পারাপারে সময় হেটে চলা পথচারীদের মধ্যেও একরকম আতঙ্ক কাজ করে, এই বুঝি ভেঙে গেলো বা কোন গর্তে পা আটকে গেলো।
জানা যায়, প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় আগে ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার পর জরুরি ভিত্তিতে অস্থায়ী ভাবে, অল্প সময়ের পাকা স্থায়ী ব্রিজ পুনঃনির্মানের নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এই বেইলি ব্রিজটি তৈরী হলেও, আজও তৈরি হয়নি স্থায়ী পাকা ব্রিজ।
অপরদিকে ঢাকা-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক থেকে কুলিয়ারচর সদরে যাওয়ার এটি মূল সড়ক হওয়ায়, এই ব্রিজের উপর দিয়েই চলাচল করতে হয় কুলিয়ারচর সদর বাজারে আসা-যাওয়ার সকল পণ্যবাহী ট্রাক, ভারী যানবাহন ও ঢাকা কুলিয়ারচরের সকল যাত্রীবাহী বাস ও পরিবহনকে। ফলে ব্রিজে ব্যবহৃত স্টিলের সিটগুলো খুলে ফাঁকা ও গর্ত হয়ে গেলেও ঝুঁকি নিয়ে চলছে এসব পরিবহন।
এই নিয়ে গত একদশকে দেশের প্রথম সারির কয়টি জাতীয় দৈনিকে অসংখ্য নিউজ হয়, কিন্তু এতেও কোন প্রতিকার আসেনি। প্রতিবার নিউজ হলেই সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ এসে জোড়াতালি দিয়ে যায়। কিন্তু সাপ্তাহ খানেক যেতেই জোড়াতালিগুলো আবার খুলে যায়, তখন আবার শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা। তখন আবার কর্তৃপক্ষ এসে জোড়াতালি দিয়ে যায়। এভাবেই চলতে থাকে ১ যুগ ধরে জোড়াতালির কাজ।
বর্তমানে ব্রিজটি জোড়াতালির উপর জোড়াতালি, কয়েক প্রকার জোড়াতালির প্রলেপের উপর দাঁড়িয়ে আছে । এটা নিয়ে প্রথম আলো ২০১৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী একটি নিউজ করে “দোয়া-দরুদ পড়ে পার হতে হয় বেইলি সেতু” এই শিরোনামে। সেই সময় নিউটি ব্যাপক সাড়া ফেললেও, শেষ পর্যন্ত জোড়াতালিতেই শান্ত থাকতে হয় এলাকা বাসীকে। স্থায়ী কেনো সমাধান আসেনি।
এই বিষয়ে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বললে তারা জানায়, প্রায় প্রতি দিনই কোন না কোন দুর্ঘটনা এই ব্রীজে ঘটে চলছে। কারও পা আটকে যাচ্ছে, কারো গাড়ির চাকা আটকে যাচ্ছে আবার কারও ভাঙা খুলে যাওয়া স্টিলের সীটে লেগে গাড়ির চাকা পানচার হওয়ার মত ঘটনা ঘটছে। এছাড়া ধির গতিতে, দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলতে গিয়ে যানজটতো সব সময় লেগেই আছে এখানে।
এই বিষয়ে পণ্যবাহী ডিস্ট্রিক্ট ট্রাক চালক বাচ্চু মিয়ার সাথে কথা বললে তিনি জানান, এই ব্রীজের উপর দিয়ে পণ্য ছাড়া খালি গাড়ি নিয়ে গেলেও, ভয়ে গা কাপে। তাই আমি কুলিয়ারচর বাজারে পণ্যনিয়ে আসলে ১০ কিলোমিটার ঘুরে আগরপুর বাজার হয়ে জামতলি দিয়ে কুলিয়ারচর আসি। এই সেতুর উপর দিয়ে পণ্যবাহী গাড়ি নিয়ে যাওয়া মানে নির্ঘাত মৃত্যু হাতে নিয়ে যাওয়া। শুধু খালি গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় আমি মাঝে মাঝে এই দিক দিয়ে আসি।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই বেইলি ব্রিজের অধিকাংশ স্টিলের সিটগুলো খুলে আলাদা হয়ে গেছে, নিছ দিয়ে খুলে গেছে নাট-বল্টু এবং বড় বড় গর্ত হয়ে আছে। যা পরে কোন রকম ঝালাই জোড়াতালি দিয়ে আটকিয়ে রাখা আছে। এ যেন এক সত্যিই মৃত্যুপুরী ব্রিজ, যেকোন সময় যেকোন কিছু ঘটে যেতে পারে।
সরজমিনে পরিদর্শনের সময় এক পথচারীর সাথে কথা বললে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ৩০ ফিটের এই ব্রিজে সাড়ে তিন হাজরের উপর জোড়াতালি। তবু এই অস্থায়ী ব্রিজ ভেঙে নতুন একটি ব্রিজ এখনও কেন করা হচ্ছে না, আমারা জানি না। মনে হচ্ছে বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা বা প্রাণহানি না ঘটা পর্যন্ত, কতৃপক্ষের টনক নড়বে না।
এই বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী বিভাগের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, এই ব্রিজের টেন্ডার হয়েছে, খুব শীঘ্রই এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এক দুই সাপ্তাহর মধ্যে, পানি একটু কমলেই নির্মাণ কাজ শুরু হবে।