বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ, ১৪৩১
ভূঁইয়া কামাল, মুলাদী (বরিশাল)।।
ঈদ ও বিভিন্ন উৎসবে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা তিন উপজেলার হাজার হাজার মানুষের পুনর্মিলনী কেন্দ্র হিসেবে সেতু বন্ধুন করে দিয়েছে মনোমুগ্ধকর পরিবেশের বরিশালের মুলাদী বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: আব্দুর রাজ্জাক ভুলু সেতু। ১হাজার ৩শত ৭৭ ফিট (১৩৭৭) সেতুটি মুলাদী, হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ ও কাজিরহাট থানার হাজার হাজার মানুষ শিশু থেকে বৃদ্ধ সকল বয়সী ভ্রমণ পিপাসুদের মিলন মেলায় মুখরিত হয়ে উঠে।
ভ্রমণ পিপাসুদের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক রয়েছে পুলিশি টহলের ব্যবস্থা। তাই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লোক সমাগম থাকে লক্ষণীয়। সেতুটিতে সকল বয়সী নারী-পুরুষের মিলন মেলায় শহুরে জীবনের যে কোন পার্কের চেয়ে এটি ছিল অনেকের কাছেই আকর্ষণীয় উপভোগ্য একটি স্থান। এখানে প্রেমিক জুটির রোমাঞ্চ, শিশু থেকে বৃদ্ধ বাবা মাকে নিয়ে কাটিয়ে থাকেন তাদের সন্তানেরা।
স্থানীয়ভাবে চিত্ত বিনোদনের কোন সুযোগ ও পরিবেশ না থাকায় বিশেষ করে শিশুদের বিনোদনের জন্য পরিবারের সদস্যরা তাদের ছেলে মেয়েদের ইচ্ছে পুরনের জন্য এক বারের জন্য হলেও উপভোগ করেন ডা: ভুলু সেতুটি।
সেতুটির উপর উঠলে চারিদিকের বাতাসে গরম শরীরকে শীতল করে ফেলে। প্রকৃতির শোভা উপভোগ করে সকাল ও বিকেল গড়িয়ে গভীর রাত পর্যন্ত সময় কাটানোর সকল উপাদান রয়েছে এখানে। প্রকৃতির নির্মল বাতাস, খোলা আকাশে মেঘের ভেলায় আত্মহারা হয়ে ভেসে চলেছেন যে যার স্বপ্নের গন্তব্যে। ভ্রমণ পিপাসুদের সকল সুবিধা না থাকলেও আনন্দ উপভোগের কমতি থাকে না আগত ভ্রমণ পিপাসুদের।
নয়া ভাঙ্গনি নদীর উপর প্রতিষ্ঠিত সেতুটি কয়েক উপজেলার মানুষের এক সেতু বন্ধনের মিলন মেলা। তখন সেতুটির রূপ লাবণ্য বেড়ে যায় শতগুণে। সেতুটির উপরে উঠলে দেখা যায়, মুলাদী বন্দরের বড় বড় অট্টালিকা, পশ্চিম পাশের তিনতলা বিশিষ্ট বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদটি দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যময় মসজিদের দিকে তাকালেই নয়ন জুড়িয়ে যায়। মসজিদের সাথেই রয়েছে মরহুম হাজী তোজম আলীর কবর স্থান। নদীটি ওনার কবরের কাছে এসেই থেমে যায়। ওনি আল্লাহর একজন প্রিয় ওলী ছিলেন বলে জানাযায়। তাই ভ্রমণ পিপাসুরা সেতু ভ্রমণ করতে এসে কবরটিও দেখে যান। পশ্চিম পার্শ্বে উত্তর দিকে রয়েছে লঞ্চঘাট। প্রতিদিন আধুনিক ও উন্নত মানের লঞ্চগুলো ঢাকার উদ্যোশে ছেড়ে যায়।
শুধু সেতুটির উপর হেঁটেই আনন্দ উপভোগ করে তাই নয়। বিভিন্ন রংয়ের নৌকা অথবা ট্রলার নিয়ে সেতুটির নিচ দিয়ে নয়া ভাঙ্গনি নদীতে ভ্রমণ করে আনন্দ উপভোগ করে। মাঝে মধ্যে দেখা যায়, সেতুটির উপর ছোট বাবুদের জন্য নানা ধরনের খেলনা নিয়ে বসে আছে দোকানি। পূর্ব পাশে র্স্থানীয় যুবসমাজ ভ্রমণ পিপাসুদের আনন্দ দেয়ার জন্য আয়োজন করে থাকে বিভিন্ন ধরনের খেলা ধুলা।
ভ্রমণ পিপাসুদের নাস্তার জন্য সেতুর পূর্বে পার্শ্বে গড়ে উঠেছে আধুনিক ও উন্নতমানের দারুচিনি চাইনিচ রেস্টুরেন্ট এ্যান্ড ফাস্টফুডসহ হরেক রকমের ফুচকার দোকান। বিশেষ দিন ছাড়াও এই সেতুটিতে প্রতিদিন বিকেলে বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষেরা নির্মল বাতাসে ভ্রমণ করে।
সেতুটির পশ্চিম পার্শ্বে রয়েছে বৃট্রিশ শাসন আমল থেকেই বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম বাণিজ্যিক বাজার মুলাদী বন্দর। উন্নত মানের মোবাইল শো-রুম, ঘড়ি, স্বর্ণালঙ্কার ও জামা কাপড়ের দোকানসহ রয়েছে বিভিন্ন দোকানপাট। কয়েক মিনিট হেটে সামনে দিকে গেলেই চোখে পড়বে মুলাদী রাধাগোবিন্দ জিওর আশ্রম কেন্দ্রীয় মন্দির। মন্দিরটি ঘুরে পশ্চিম দিকে আসলেই দেখা মিলবে মুলাদী সরকারী কলেজ। কলেজ গেইটটিতে রয়েছে ডালপালা ছড়ানো কৃষ্ণচূড়া গাছ। গাছটির নীচে দাঁড়িয়ে শিতল বাতাসে ঠান্ডা হয়ে চারতলা বিশিষ্ট ভবনের চারিদিকে ঘুরে দেখবে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নানা ফুল আর ফলের গাছ গাছালি। কলেজটির পশ্চিম এবং দক্ষিণকোণে রয়েছে উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। কলেজ চত্তরটি ঘুরে দেখার পরই চোখে পড়বে উপজেলা পরিষদ চত্তর। চত্তরের ভিতরে রয়েছে একটি বড় পুকুর, পুকুরের চারিদিকে রয়েছে সারিসারি নারিকেল ও নানাবিধ ফলের গাছ আর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিভিন্ন রংয়ের বাসভবন। পুকুরের পূর্ব পার্শ্বে রয়েছে সরকারী নার্সারী বাগান। যা একনজরে দেখলেই নয়ন জুড়িয়ে যায়। দেখতে দেখতে ক্লান্ত হলে পুকুরের পাশেই বসে বিশ্রাম নেয়ার জন্য রয়েছে বসার সুব্যবস্থা।
পুকুর ঘাটে বিশ্রাম নেয়ার পরে আপনি ব্যক্তিগত গাড়ী, অটোরিক্সা ও ভ্যান নিয়ে ২০-৩০ মিনিটে ঘুরে আসতে পারেন পাতারচর বধ্যভূমি ও এক নয়নাভিরাম পরিবেশ ছৈলা নদীর পাড়। নদীর পাড়টিতে পাকা রাস্তা ও পাথরের বোক দ্বারা বাঁধানো রয়েছে। ওখানে হেঁটে হেঁটে বা বসে দেখতে পাবেন ছৈলা নদীতে বয়ে যাওয়া বড় বড় লঞ্চ আর মাছ ধরার নৌকার দৃশ্যেগুলো। দেখতে পাবেন নদীর পাড়ে থৈ থৈ করা পানিতে জেগে ওঠা নতুন চরের মধ্যে দোলা খাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির ধানগাছগুলো। যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। সন্ধ্যা বেলার ছৈলা নদীর ওপারে গাছ-গাছালির আড়ালে সূর্য মামার হারিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে সারাদিনের ভ্রমণ যেন স্বার্থক হয়ে উঠে।