বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ, ১৪৩১
গোলাম কিবরিয়া, বরগুনা।।
দিন দিন বনের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা এতে আয়তনে কমছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল টেংরাগিরি বন। সেখানকার সংঘবদ্ধ কয়েকটি চক্র বনের হাজার হাজার গাছ কেটে নিয়ে গেছে। যাতে করে দিন দিন উজাড় হয়ে যাচ্ছে বন। প্রাণী, মৎস্য এবং মধুসহ বনের নানা সম্পদ লুট করতে একাধিক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে, বন সংশ্লিষ্ট এলাকার টহল ফাঁড়িগুলোতে পাহারার কাজে ২/৪ জন বনকর্মী থাকলেও বন কর্মকর্তার যোগসাজশে বনজসম্পদ পাচারকারী চক্র নির্বিচারে পাচার করে যাচ্ছেন বনের সম্পদ। বনে যেসব অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে তার অধিকাংশ ঘটনার সঙ্গে ওই জনবসতিদের কারও না কারও সম্পৃক্ততা থাকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, টেংরাগিরি বনের নানা সম্পদ লুট করতে প্রভাবশালী চক্র বনসংলগ্ন এলাকার জনবসতিদের মধ্যে কিছু অসাধু ব্যক্তিকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বনের অভ্যন্তরে পাঠিয়ে বহু অপরাধমূলক কর্মকান্ড ঘটাচ্ছে। স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি মধু সংগ্রহের কথা বলে বনের মধ্যে প্রবেশ করে বনের গাছ, প্রাণী, মৎস্য পাচার করে দিচ্ছে। এসব ঘটলেও কখনওই আইনের আওতায় আসেনি প্রভাবশালী চক্রের কোন সদস্য। কিন্তু ওইসব জলাশয়ের মাছ, বনের মধুসহ বনজ ও প্রাণিসম্পদ লুটের উদ্দেশে প্রভাবশালী চক্র অসাধু বন-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে থাকেন।
গত কয়েক বছর ধরে চক্র গুলো নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা- ঘটালোও দেখার যেন কেউ নেই। স্থানীয়রা বলেন, মধু সংগ্রহের কথা বলে স্থানীয় দুইটি চক্র কাজ করে। বন সংলগ্ন বড় আমখোলা গ্রামের লিটন ও জামাল চক্র দুইটি দুটো গ্রুপে প্রায় ২০ জনের মত কাজ করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে দিনদিন বনের গাছ ও বনজ সম্পদ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না করলে টেংরাগিরি বন রক্ষায় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
নাম গোপন রাখার শর্তে বনসংলগ্ন এলাকার কয়েকজন স্থানীয়রা বলেন, টেংরাগিরি বন এর পাশে বসবাসরত কিছু অসাধু ব্যক্তিরা বনের মধ্যে মধু সংগ্রহের কথা বলে বনের মধ্যে ঢুকে বনের গাছ কেটে পাচার করে দিচ্ছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কিছু নেতার ছত্রছায়ায় থেকে টেংরাগিরি বনে ঢুকে বিশ দিয়ে মাছ শিকার ও ফাঁদ পেতে প্রাণী শিকারের পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে পশু হত্যায়ও আংশ নিয়ে থাকে। এছাড়া শুষ্কমৌসুম এলেই অবৈধভাবে বিভিন্ন জলাশয়ের মাছ এবং আগুনের কুন্ডলি সাজিয়ে মধু সংগ্রহ করে থাকেন কতিপয় অসাধু পেশাজীবী। তাছাড়া বনরক্ষীদের তেমন কোন টহল ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকসহ সাধারণ মানুষের বনের অভ্যন্তরে অবাধ যাতায়াত থাকায় বন্ধও করা যাচ্ছে না টেংরাগিরি বনের গাছ পাচার। বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দিনদিন পাচার হচ্ছে বনের গাছ ও বনজ সম্পদ।
কর্মকর্তাদের কথা অনুযায়ী কাজ না করলে টেংরাগিরি বনে পেশাজীবীরা কাজ করতে পারেন না বনসংলগ্ন এলাকার অনেক পরিবার।
দিন দিন বনের গাছ উজানের ঘটনা ঘটলোও বনবিভাগ শুধুমাত্র তদন্ত কমিটি করেই দায় সেরেছে। কিন্তু সুর্নিদিষ্টভাবে কাউকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পারেননি তারা। এছাড়া প্রভাবশালী চক্রের সংশ্লিষ্টতা থাকলেও কখনওই তাদের দেখা যায়নি, তাই তাদের বিচারের মুখোমুখিও করা যায়নি।
বনসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা আবু বক্কর বলেন, অসাধু কিছু ব্যক্তিরা বনের মধ্যে মধু সংগ্রহের কথা বলে প্রবেশ করে নানা ধরনের অপকর্ম ঘটাচ্ছে। বিশেষ করে টেংরাগিরি বন সংলগ্ন এলাকা বড় আমখোলা গ্রামের কয়েকটি চক্র সক্রিয়। অসাধু বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বনজ সম্পদ লুট করছে।
এ বিষয়ে তালতলী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বনের মধ্যের অপরাধী চক্রের নাম ঠিকানা সংগ্রহ চলছে। অপরাধী চক্র দের শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।