শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
এইচ,এম হুমায়ুন কবির, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)।।
যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার আন্ধারমানিক নদীতে বালিয়াতলী পয়েন্টে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছে ডিসেম্বরে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে শেষ হচ্ছে মূল সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আন্ধারমানিক নদীতে বালিয়াতলী পয়েন্টে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে ৯৭ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। উপজেলা বালীয়াতলী, লালুয়া, মিঠাগঞ্জ, ধুলাসার, ডাবলুগঞ্জ পাঁচটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ লাগব হবে এবং উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ হবে। খেয়া কারনে সময় ও অর্থ দুটোই নষ্ট হয়। উজ্জীবিত হবে তেমনি গ্রাম ও শহরের মধ্যে পার্থক্য কমে আসবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও কৃষিজাত পন্য সহজেই বাজারজাত করা সম্ভব হবে। দিনে এখান দিয়ে খেয়া নৌকায় পার হওয়া গেলে ও রাতে পারাপারের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা খেয়ালাকা ডাকাডাকি করতে হয়। তখন খুব বেশি বেকায়দায় পড়তে হয়। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় রোগী নিয়ে। খোয়াখাটে দীর্ঘ যানজট দেখা দিচ্ছে প্রতিদিন। দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে পাচঁটি ইউনিয়নের লোকজন ও পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা গঙামতি পর্যটকদের। একটি খেয়া ছাড়লে আরেকটি খেয়ার জন্য আধা ঘন্টায় যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সেতুটি উন্মুক্ত হলে ব্যবসায়ীদের পন্য পরিবহন সহজ হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৩ সালের ১৯ নবেম্বর তিনি এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৮ সালের মধ্যে এই সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জোয়ার ভাটার সমস্যা এবং মহামারি করোনার কারনে সেতুটির নির্মান কাজ সম্পন্ন করতে দেরি হয়েছে। এর পর সময় বাড়ানো হয়। এ বছরের ডিসেম্বরে মূল সেতুর সকল কাজ সম্পন্ন হবে। আগামী বছরের মার্চে শেষ হবে সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সুত্রে জানা গেছে, ১২০ কোটি টাকা ব্যয় এ সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে। ১৩টি স্প্যানের ওপর ফুটপাথসহ নয় দশমিক আট মিটার প্রস্থ হচ্ছে সেতুটি। ৬৭৭ মিটার দীর্ঘ সেতুর রয়েছে দুই পাড়ে পাঁচশ’ মিটার এ্যাপ্রোচ সড়ক। এছাড়া রজপাড়া থেকে পায়রা বন্দরের সঙ্গে নির্মিত ফোর লেন সড়ক থেকে সংযোগ সড়ক নির্মিত হচ্ছে বিকল্প সেতুর এ্যাপ্রোচ সড়ক পর্যন্ত। পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়কটির প্রস্থ থাকছে ৩৩ ফুট। পায়রা বন্দরগামী ফোর লেন হয়ে সংযোগ সড়ক গিয়ে মিলছে নজরুল ইসলাম সেতুর সঙ্গে। ৩৩ ফুট প্রস্থ সংযোগ সড়কটি নির্মাণে কালভার্টসহ ব্যয় প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এ সেতুর কলাপাড়ার ইটবাড়িয়া অংশে কলাপাড়া শহরের দিকে ৪০০ ফুট আর সিসি সড়ক করা হবে। এই সংযোগ সড়ক ঘেঁষে দুই দিকে সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে। থাকবে সড়কের স্লোপে ছাতা, বেঞ্চিসহ দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য। সেতুর বালিয়াতলী এপ্রোচের নিচ দিয়ে (আন্ডারগ্রাউন্ড) থাকছে লালুয়া যাওয়ার সড়ক। সব কয়টি পাইল এবং গার্ডার স্থাপন করা হয়েছে। সেতুর ওপর ঢালাই দেয়াও শেষের পথে। সেতুর দুই দিকের রেলিংসহ ফুটপাথ কাজ চলছে। দ্রুত এগিয়ে চলছে দুই পাড়ের এ্যাপ্রোচসহ সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজ। সংযোগ সড়কের বালু-মাটির কাজ শেষ হয়েছে।
বিকল্প পথে গঙ্গামতি পর্যটন পল্লী হয়ে কুয়াকাটায় যাওয়ার সুযোগ মিলবে আন্ধারমানিক নদীর বালিয়াতলী পয়েন্টের শুধু সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু পেরিয়ে কুয়াকাটায় যেতে পারবেন পর্যটক-দর্শনার্থীসহ সাধারণ মানুষ। পায়রা বন্দরের রাবনাবাঁধ চ্যানেলসহ পর্যটন পল্লী গঙ্গামতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য অবলোকন ও এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ দ্বিতীয় বৌদ্ধমন্দির মিশ্রিপাড়া এবং আদিবাসী রাখাইনদের হাতে তাঁতে বোনা লুঙ্গি পর্যটকদের দেখতে সহজ হবে। গঙ্গামতির সৈকত জুড়ে রয়েছে লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরন। রয়েছে ঝাউবনসহ ম্যানগ্রোভ প্রজাতির কেওড়া, ছইলা, গেওয়া, বাইনসহ নানান প্রজাতির সারিসারি বৃক্ষ। সূর্যোদয় মত এমন দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতিদিন সমাগম ঘটে শতশত পর্যটক। এখানের লাল কাকড়াসহ প্রাকৃতিক দৃশ্য অনেককে মুগ্ধ করছে।
কলাপাড়া থেকে কুয়াকাটা যেতে তিন সেতু মাত্র ২১ কিমি পথে সমুদ্র সৈকতে যেতে তিনটি সেতু শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল পার হতে হয় এবং তিনটি সেতুর টোল ভাড়া দিতে বাড়তি খরচ।
এ বিষয় জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী মো.দেলোয়ার হোসেন বলেন, ইতো মধ্যে সেতুর নির্মান কাজ প্রায় শেষের পথে। বাকি আছে রাস্তার কাজ তা চলমান রয়েছে।