মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ, ১৪৩১
ভূঁইয়া কামাল, মুলাদী (বরিশাল)।।
বরিশালের মুলাদী উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়নে বাহাদুরপুর গ্রামে একতা বাজার সংলগ্ন কদমতলা নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিন পর এ খেলা উপভোগ করতে নদীর তীরে হাজার হাজার নারী, পুরুষ ও শিশুদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
গত ১২ এপ্রিল বিকেল ৪টায় ঈদ আনন্দ ও নৌকা বাইচে পুরস্কার বিতরণ ও বাহাদুরপুরের গুণীজনদের মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ‘আমরা বাহাদুরপুরবাসী’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
নৌকা বাইচ আয়োজনের সমন্বয়কারী মোঃ ইমরান হোসেন ফকিরের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন, মুলাদী-বাবুগঞ্জ আসনের সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম কিবরিয়া টিপু।
বিশেষ অতিথি ছিলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব কৃষিবিদ ড. মোঃ হারুন অর রশিদ বিশ্বাস, মুলাদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিজাম উদ্দিন, মুলাদী পৌর মেয়র শফিক উজ্জামান রুবেল, পুলিশ সুপার আনছার উদ্দীন শুভ, কেন্দ্রিয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহির উদ্দীন খসরু, ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ মিজানুর রহমান হাওলাদার, থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আশরাফুল আলম, পৌর কাউন্সিলর আরিফ হোসেন সরদার, উপজেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিম আহমেদ চৌকিদার, চাঁদপাশা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন রাড়ী, কাজিরচর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মন্টু বিশ্বাস, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রফিক উজ্জামান রাসেল, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি এসএম কামাল পাশা, সাধারণ সম্পাদক বদরুল হক, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আনোয়ার তালুকদারসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিরা।
প্রতিযোগীতায় ৪টি নৌকা অংশগ্রহণ করে। কাজিরচর ইউনিয়ন পরিষদের উমা তরী বিজয়ী হয়ে মোটরসাইকেল ও মোঃ খলিলুর রহমানের সোনারতরী নৌকা দ্বিতীয় স্থান লাভ করে ফ্রিজ পুরস্কার লাভ করে।
মুলাদী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলাধুলা আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে। গ্রামবাংলার সেই খেলাধুলার প্রাণচাঞ্চল্য এখন ঝিমিয়ে পড়েছে। গ্রামীণ খেলা হাডুডু, কাবাডি, দাঁড়িয়াবান্ধা, নৌকাবাইচ, লাঠিখেলা, গোল্লাছুট, কানামাছি ভোঁ ভোঁ, ডাংগুটি, ভলিবল, এমনকি ফুটবল খেলাও এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না কোথাও। মুলাদী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় খেলা ছিল হাডুডু ও ফুটবল। বর্ষা মৌসুমে প্রতি গ্রামে প্রতিযোগিতামূলক এ খেলা চলত। নদীমাতৃক এলাকা হওয়ায় নৌকা বাইচ ছিল খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু নদীভাঙনে মানুষের মনের আনন্দ কেড়ে নিচ্ছে, অপর দিকে খাল-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় নৌকা রাখার সমস্যার কারণে নৌকা বাইচ বিলুপ্তির পথে। গ্রামের এসব ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার স্থান দখল করে নিয়েছে বর্তমান সময়ের খেলা ক্রিকেট।
আগের মতো স্কুলের আঙিনায় হাডুডু কিংবা ফুটবল খেলা চোখে পড়ে না। উপজেলার স্টেডিয়ামটিতে এখন গরু ও ছাগল চরানো হয়, মোটরসাইকেল চালকদের ট্রেনিংয়ের উত্তম জায়গা। উপজেলার ক্রীড়া সভাপতি থাকেন পদাধিকার বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সম্পাদক নির্বাচিত হন ক্রীড়ামোদীদের পক্ষ থেকে একজন। গ্রামীণ খেলাধুলার ঐতিহ্য ধরে রাখা জন্য কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন গ্রামীণ জনগণ।
কৃষিবিদ ড. মোঃ হারুন অর রশিদ বিশ্বাস বলেন, গ্রামীণ ঐতিহ্য নৌকা বাইচ ঈদের আনন্দকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। যারা নৌকা বাইচের আয়োজন করেছেন তাদেরকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। গ্রামীণ আরো খেলা-ধুলা রয়েছে মাঝে মাঝে তার আয়োজন করলে গ্রামীণ মানুষ দুঃখের মাঝেও আনন্দ পাবে।