শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ, ১৪৩১
ভূঁইয়া কামাল মুলাদী (বরিশাল)।।
বরিশালের মুলাদী উপজেলার একমাত্র স্টেডিয়াম জড়াজীর্ণ হয়ে চরম অবহেলায় পরিত্যাক্ত হয়ে পড়েছে। যে কোন সময়ই ধ্বসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা পারে। বছরের বেশিরভাগ সময় পানি জমে থাকায় কোনো খেলাধুলা হয়নি এখানে। যেখানে স্টেডিয়ামটি ক্রীড়া মৌসুমে মুখরিত থাকার কথা, সেটি জড়াজীর্ণ অবস্থায় বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তদারকী না থাকায় স্টেডিয়ামের জমি বেদখল হওয়ার আশঙ্কা করেছেন স্থানীয়রা।
স্কুল সুত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদরে থানার পূর্ব দিকে মুলাদী সরকারি মাহমুদজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় পৌনে ২ একর জমি রয়েছে। জমিটি বিদ্যালয় থেকে ৫০০ মিটার দূরত্বে অবস্থিত। বিদ্যালয়ের সবসময় কাজে না লাগায় ১৯৮০ সালের দিকে তৎকালীন সংসদ সদস্য ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী সিরাজুল হক মন্টু সেখানে স্টেডিয়াম নির্মাণ করেন। এরপর থেকে এটি বিদ্যালয়ের মাঠের পরিবর্তে স্টেডিয়াম মাঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। থানার পাশে হওয়ায় কেউ কেউ এটাকে থানার মাঠও বলে থাকেন।
স্টেডিয়াম হওয়ার পর থেকে মুলাদী মাহমুদজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, উপজেলার আন্তঃ ইউনিয়ন প্রতিযোগিতা, শীতকালিন খেলাধুলা এখানেই অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু ১৯৯৪ সালের পর থেকে কোনো ক্রীড়া অনুষ্ঠান হয়নি স্টেডিয়ামটিতে। ফলে মাঠ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি গ্যালারিটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে এবং বিভিন্ন স্থান থেকে আস্তর খসে পড়ছে। গ্যালারির নিচে রয়েছে চা বিস্কুটের দোকান। যেকোন সময় ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানিয়ে স্থানীয়রা।
মুলাদী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ আলী আকবর মুন্সী জানান, আশির দশকে স্টেডিয়াম নির্মাণের পর উপজেলার বিভিন্ন খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এখানেই অনুষ্ঠিত হতো। দর্শকদের বসার সুব্যবস্থা থাকায় মুলাদী মাহমুদজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক অনুষ্ঠানগুলো হতো স্টেডিয়ামে। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে এখানে খেলাধুলা হচ্ছে না। সংস্কার না করায় মাঠের গ্যালারিটি পরিত্যাক্ত হয়ে পড়েছে। তিনদিক দিয়ে রাস্তা হয়ে মাঠটি ছোট হয়েছে। তদারকী না থাকলে স্টেডিয়ামের জমি বেদখল হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
মুলাদী গ্রামের আল মামুন আলমাছ বলেন, স্টেডিয়ামটি অনেক বড় এবং ক্রীড়া অনুষ্ঠানের উপযুক্ত স্থান। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোশাররফ হোসেন মঙ্গু ফুটবল খেলাস বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন। এরপর আর বড় কোনো ক্রীড়া অনুষ্ঠান এখানে হয়নি। মাঠটি সংস্কার না হওয়ায় পরিত্যাক্ত হয়ে যাচ্ছে। গ্যালারিটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য দিদারুল আহসান খান জানান, উপজেলার সব খেলাধুলা মুলাদী সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। কলেজ খোলা থাকলে অনেক সময় সমস্যা দেখা দেয়। স্টেডিয়ামটি স্বতন্ত্র জায়গায় আছে। তাই ক্রীড়ার মান উন্নয়নের জন্য স্টেডিয়ামের গ্যালারি সংস্কার ও মাঠটি সমতল করা প্রয়োজন। স্টেডিয়ামটি খেলাধুলার উপযোগী করার জন্য উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুরোধ করা হয়েছে।
মুলাদী সরকারি মাহমুদজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নাসির উদ্দীন হাওলাদার বলেন, জমির মালিক বিদ্যালয়টির হলেও মাঠটি দূরে হওয়ায় তেমন কাজে আসছে না। বিদ্যালয়ের সামনে মাঠ বড় হওয়ার পর থেকেই এখানেই অনুষ্ঠান করে থাকি। নিরাপত্তার স্বার্থেই অনুষ্ঠান স্টেডিয়ামে করা হচ্ছে না। সরকারি ভাবে স্টেডিয়ামটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিদ্যালয় থেকে অনাপত্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন সংস্কার হচ্ছে না আমার জানা নাই।
উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ হোসাইনী জানান, স্টেডিয়ামটি সংস্কার ও গ্যালারি পুনঃনির্মাণের সরকারি উদ্যোগের বিষয়টি আমার জানা নাই। তবে ক্রীড়াবিদদের স্বার্থে এবং খেলাধুলার মান উন্নয়নের জন্য স্টেডিয়ামটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।