শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১
ভূঁইয়া কামাল, মুলাদী (বরিশাল)॥
বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার গ্রামীণ জনপদ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আকন্দ গাছসহ বিভিন্ন ঔষধীগাছ। এক সময় বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে নিরস পতিত জমিতেও যে মূল্যবান ভেষজ উদ্ভিদ পাওয়া যেত অথচ এখন তা দুর্লভ। তার নাম আকন্দ বা অর্ক।
আকন্দ উন্মুক্ত পতিত জমি, রাস্তার পার্শ্ববর্তী স্থান, গ্রামে কাঁচা রাস্তার পাশে ও বিশেষ করে শুকনো স্থানে ভালো জন্মে। আকন্দের বংশবিস্তার হয় আঁশ এবং বাতাসের মাধ্যমে। এর ফুল ফোটে ফালগুন ও চৈত্র মাসে। এ গাছ বিশ্বের ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত, চীন, পাকিস্তান ও নেপাল দেশগুলোতে পাওয়া যায়।
আকন্দ এক প্রকারের ঔষধি গাছ। বিজ্ঞানীদের মতে, এর দুটি প্রজাতি রয়েছেঃ কেলোট্রপিস গাইগেনটিয়া (Calotropis Gigantea) এবং কেলোট্রপিস প্রসেরা (Calotropis Procera)। গাছটির বিষাক্ত অংশ হলো পাতা ও গাছের কষ। কষ ভীষণ রেচক, গর্ভপাতক, শিশু হন্তারক, পাতা মানুষ হন্তারক বিষ। আকন্দের ফুল দেবাদিদেব মহাদেবের পুজোয় লাগে। আকন্দের ফুলকে সংস্কৃতে অর্ক পুষ্প বলা হয়ে থাকে ।
এই গাছ সাধারণতঃ ৩-৪ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। আকন্দ দুই ধরনের গাছ শ্বেত আকন্দ ও লাল আকন্দ। শ্বেত আকন্দের ফুলের রং সাদা ও লাল আকন্দের ফুলের রং বেগুনি হয়ে থাকে। গাছের পাতা ছিড়লে কিংবা কাণ্ড ভাঙ্গলে দুধের মত কষ (তরুক্ষীর) বের হয়। ফল সবুজ, অগ্রভাগ দেখতে পাখির ঠোটের মত। বীজ লোম যুক্ত ও বীজের বর্ণ ধূসর কিংবা কালচে হয়ে থাকে।
ওষুধ হিসেবে আকন্দের ভেষজ ব্যবহার বিষয়ে আয়ুর্বেদ ও ইউনানি চিকিৎসায় উল্লেখ রয়েছে। এই উদ্ভিদের ব্যবহার্য অংশ হলো ছাল, পাতা, ফুল, মূল ও কষ। বায়ুনাশক, উদ্দীপক, পাচক, পাকস্থলীর ব্যথা নিবারক, বিষনাশক, ফোলা নিবারক। যদি ঠান্ডা লেগে বুকে সর্দি লেগে যায় তবে প্রথমে বুকে পুরোনো ঘি ঢেলে এর উপর আকন্দ পাতা গরম করে ছেকা দিলে আরাম পাওয়া যাবে। অর্শ, ক্রিমি ও শ্বাসকষ্টে উপকারী। ব্রণ, কোষ্ঠকাঠিন্য, বুকে কফ, খোসপাচড়া, একজিমায় আকন্দের পাতা, কাণ্ড ও মূলের ব্যবহার রয়েছে। ইহার ফুল বহুমূত্ররোগ এর জন্যে বিশেষ উপকারী বলে মনে করা হয়। শরীরে খোস পাচড়া হলে আকন্দ আঠার সাথে চার গুণ সরিষার তেল মিশিয়ে গরম করে গরম তেলের সাথে কাঁচা হলুদের রস মিশিয়ে খোস পাচড়ায় ভালোভাবে মেখে দিলে এটা দ্রুত ভালো হয়ে যায়।
খেলতে গিয়ে বা পড়ে গিয়ে পা মোচকে গেলে আকন্দ পাতা প্রথমে গরম করে ব্যাথা স্থানে ছেকা দিলে ব্যাথা কমে যায়। বিষাক্ত কিছু যেমন বিছে, কাঠ পিপড়া ইত্যাদিতে কামড়ালে আকন্দ পাতার রস লাগালে বিষাক্ত কেটে যাবে। মুখে ব্রণ হলে আকন্দ পাতা ভিজিয়ে ব্রণের উপর চেপে রেখে দিলে ব্রণ ফেটে যাবে। শরীরের কোন স্থানে দূষিত ক্ষত হলে সেই স্থানটিতে পাতা সিদ্ধ জল দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। তাহলে পুঁজ হবে না। আকন্দ পাতার সোজা দিকে সরিষার তেল মাখিয়ে পেটের উপর ছ্যাকা দিলে পেট কামড়ানো সেরে যাবে। কোন স্থান ফুলে গেলে সেই স্থানে আকন্দ পাতা বেধে রাখলে ফুলা কমে যায়। আকন্দ পাতার মূল গুড়া করে ২ গ্রাম করে প্রতিদিন খেলে ক্ষুধা বৃদ্ধি পাবে।
এ প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান গাছ যখন বিলুপ্তির পথে তখন মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সাইয়েদুর রহমান উদ্যোগ নিয়ে হাসপাতাল চত্ত্বরে ভেষজ বাগান করেছে। আকন্দ, আমলকি, নিম, অর্জুন, হরিতকি, জাম, আমরুজ, বানর লাঠি, শিমুল ও তুলসী গাছসহ প্রায় অর্ধশত বিভিন্ন ঔষধী গাছ লাগিয়েছেন।
গাছগুলো যাতে ছাগল, গরু ও মানুষে নষ্ট করতে না পারে সেজন্য তিনি ভেষজ বাগানের চারিদিকে ইট ও লোহার খাঁচা দিয়ে দেয়াল ঘিরে দিয়ে সুরক্ষার চেষ্টা করছেন।
তিনি ২০২০ সালে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা সেবায় রোগীদের সন্তুষ্টি, মেডিকেল অফিসার ও উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, নার্সিং অফিসার, স্বাস্থ্যকর্মীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি, নিয়মশৃঙ্খলা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য হেলথ মিনিস্টার ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ পুরস্কার গ্রহণ করেন।