বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ, ১৪৩১
আবদুর রশীদ।।
পৃথিবী এমন একটি স্থান যেখানে প্রতিটি সৃষ্টিকে নিজ কর্মের মাধ্যমে জীবীকা নির্বাহ করে বাঁচতে হয় ৷ কর্মহীন কোনো প্রাণী’ই স্রেফ বসে বসে বেঁচে থাকতে পারে না ৷ তাকে বের হতে হয় রিজিকের সন্ধানে এবং বিচরণ করতে বিভিন্ন স্থানে ৷ ‘কর্ম’ Upper Level-এ অবস্থান করা জীবনের অন্যতম সেরা স্তর ৷ তবে শর্ত হলো— সেটা হালাল হতে হবে ৷
এই কর্মের পেছনে সমাজের কিছু দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিয়মান ৷ বর্তমান সমাজ উল্লেখ করে যে, শিক্ষিত ও উচ্চতর পড়াশুনায় বিজ্ঞদের যে কোনো কর্ম মানানসই নয়; বরং ব্যাংকিং জব, ভালো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা, টপ লেভেলের কোম্পানিতে ইমপ্লয়মেন্ট ইত্যাদি একজন শিক্ষিত ব্যক্তির সেটলমেন্ট ৷ অপর একটি বর্ণনা হলো— পড়াশুনার পেছনে বহু সময় অতিক্রান্ত শিক্ষিত ব্যক্তির ভালো কোনো জব না হলে অন্য কোনো কর্মে জড়িয়ে পড়াকে সমাজ তেমনটা সুনজরে তাকায় না; বরং বলে থাকে এই সময় এসে এগুলো শোভনীয় না (দিস ইজ দ্যা কমন ডায়লগ অব দ্যা সোসাইটি) ৷ এছাড়াও প্রচলিত আরো একটি মন্তব্য হলো— কর্মের ক্ষেত্রে বয়সকে সীমাবদ্ধ করা ৷ অর্থাৎ- বয়স ২৫-৩০ পার হওয়ার পর কেউ এমন একটা কর্মে জড়ায় আর সমাজ তাকে বলে যে, এই বয়সে শেষ পর্যন্ত এটা করছ? অথবা এত পড়াশুনা করে শেষ পর্যন্ত ব্যবসা করছ? এই ধরনের বাক্যগুলো সমাজের নিত্য শ্রুত বাণী ৷ শিক্ষিত ব্যক্তির জন্য যেন ব্যবসা করা হারাম ৷ অথচ আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, আল্লাহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন ৷ (সূরা বাকারাহ: ২৭৫)
অপরদিকে বেশিরভাগ চাকরি হলো বর্তমান সূদ ও ঘুষভিত্তিক ৷ সমাজের এই মতবাদ কতটুকু গ্রহণযোগ্যতার মানদণ্ডে দণ্ডায়মান তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷
এখন আসুন, ইতিহাস পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কি শিক্ষা রেখে গেছেন তা জানার চেষ্টা করি ৷
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহামানব যার সমতুল্য পৃথিবীর কোনো কিছুই উল্লেখ করার মতো নেই, হযরত মুহাম্মদ (স:) যিনি ছিলেন বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানী, চিকিৎসকের বড় চিকিৎসক, শ্রেষ্ঠ মুটিভেইশনাল ব্যক্তি, সুপথ নির্দেশক, কঠোর পরিশ্রমী, অতিব দয়ালু এবং শ্রেষ্ঠ চরিত্রের অধিকারী এই মহান ব্যক্তির প্রথম ‘কর্ম’-ই ছিল ছাগল ছড়ানো ৷ একটু বয়স হতেই চাচার সাথে ব্যবসার উদ্দেশ্যে কাফেলা; পরবর্তীতে বিজ্ঞ ব্যবসায়ী হন এবং পাশাপাশি ছিলেন পুরো মানবজাতীর জন্য শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ৷ এখানে কোন শিক্ষা নিহীত? শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি থেকেও পাওয়া যায় ছাগল ছড়ানোর মতো নিম্নস্তরের কঠিন কাজ ও সময় উপযোগী ব্যবসায়ী কর্ম ৷ এছাড়াও প্রত্যেক নবী-রাসূলগণ ছিলেন পৃথিবীর এক একজন মহামানব ৷ তাঁরা কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা ভালো কোম্পানিতে চাকরীরত ছিলেন?
শ্রেষ্ট সাহাবিদের মধ্যে প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা:) যিনি ছিলেন সবচেয়ে কোমল প্রকৃতির মানুষ ও সঠিক বিজ্ঞ স্বপ্ন ব্যাখ্যাকারীও বটে ৷ কুরআনের আয়াত এতটায় বেশি বুঝতেন যে, একটি আয়াত নাজিল হওয়াতে তিনি প্রচণ্ড কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন ৷ অথচ, মজলিসে বসা শত সাহাবীর কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল না ৷ জানতে চাওয়া হলে তিনি উত্তর করলেন এই আয়াত হল রাসূল(স:)-এর বিদায়ের সংবাদ ৷ দেখুন, এতবড় মানব যিনি শ্রেষ্ঠ শিক্ষিত এবং আরবের একজন শ্রেষ্ঠ ও উঁচু স্তরের ব্যবসায়ী ছিলেন ৷ তিনি কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা ভালো কোম্পানিতে চাকরীরত ছিলেন?
যুগের শ্রেষ্ঠ ফকিহ্ ঈমাম আবু হানিফা(রহ.) যার ফিকহি গ্রন্থকে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় ও যার উপর পিএইসডি অর্জন করা হয় ৷ এমন ব্যক্তিও ছিলেন একজন উঁচু স্তরের কাপড়ের ব্যবসায়ী ৷ তিনিও কি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা ভালো কোম্পানিতে চাকরীরত ছিলেন?
যুগের শ্রেষ্ঠ কবি বাংলার কাজী নজরুল ইসলাম যার উপর শিশু শ্রেণী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত স্নাতক ডিগ্রী ও পিএইসডি ডিগ্রী অর্জন করা হচ্ছে ৷ তিনি কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা ভালো কোম্পানিতে চাকরীরত ছিলেন?
এইভাবে শত শত উদাহরণ পেশ করা কোনো কঠিন কিছু না ৷ কারণ ইতিহাস এইভাবে সাক্ষ্য বহণ করছে ৷ ইতিহাসকে বদলানো যায় না; বরং ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হয় ৷ তাই যে কোনো সময়, যে কোনো পরিস্থিতে, যে কোনো হালাল কর্মে জড়িত হওয়া সম্মানের কাজ ৷ শিক্ষা কখনো কোনো কর্মকে নির্দিষ্ট করে না; বরং সকল প্রকার হালাল কর্মে জড়িয়ে পড়তে উদ্ভুদ্ধ করে ৷ অতএব, প্রত্যেকের উচিত সবার হালাল কর্মকে স্বাগত জানানো ও সম্মানের চোখে দেখা— চাই তা রিক্সা চালানো, কৃষি ও দিনমজুরী থেকে শুরু করে বিশ্বদ্যালয় ও বড় কোম্পানীতে চাকরী করা ৷
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় আর আল্লাহর অনুগ্রহ হতে অনুসন্ধান কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার ৷ (সূরা জুমু’আহ: ১০)
আল্লাহ তা’য়ালা সবার মন-মানসিকতাকে সুস্থ ও বিবেকসম্পন্ন করে দিক ৷ আমিন !
লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রাম
সদস্য, বাংলাদেশ নবীন লেখক ফোরাম।