শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র, ১৪৩০
ডাঃ মোঃ আলী হাসান।।
জ্বরের সাথে খিঁচুনি শিশুদের অনেক কারণে হতে পারে, এর ভিতরে কিছু আছে খুব মারাত্মক রোগের কারণে হয় যেগুলোর সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না করলে শিশু মারাও যেতে পারে, বেঁচে থাকলে পঙ্গুত্ব বরণ করতে পারে। আজ যে জ্বরজনিত খিঁচুনির কথা বলবো তা অতি সাধারণ, এটা আপনাআপনি ভাল হয়ে যায়, এর তেমন কোন চিকিৎসা নাই, শুধু উপসর্গ দেখে তার চিকিৎসা দিলেই হয়। তবে বিষয়টা যদি বাবা-মার জানা না থাকে তবে সেটা তাদের জন্য হয় মারাত্মক আতংকের বিষয়। তাই এটা সব বাবা মারই জানা থাকা ভাল।
এই জ্বর জনিত খিঁচুনিটা শিশুদের সাধারণত চার মাস বয়স থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যেই হয়ে থাকে। একটু ব্যতিক্রম ছাড়া আর শতকরা ছয় থেকে নয় ভাগ শিশদের এটা হয়। প্রথমে জ্বর আসে, এই জ্বর আসার চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই সাধারণত খিঁচুনি শুরু হয়। জ্বর কত হলে খিঁচুনি হবে তার নির্দিষ্ট কোন সীমারেখা নাই। তবে সাধারণত জ্বরটা যখন তাড়াতাড়ি বেড়ে যায় তখনই খিঁচুনি হয়। খিঁচুনি চার হাত পায়েই হয়, চোখ তারাইয়া যায়, শিশু প্রশ্রাবও করে দিতে পারে। খিঁচুনিটা সাধারণত দুই তিন মিনিট স্হায়ী হয় তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোন মতেই পনেরো মিনিটের বেশি না। সাধারণত একট জ্বরে একবারই খিঁচুনি হয়, খিঁচুনি থেমে গেলে শিশুটি একেবারে স্বাভাবিক। এরোগের সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে না। তবে যদি কারো ঘন ঘন খিঁচুনি হয় এবং ঠিকমত চিকিৎসা না করায় সেখানে হতে পারে।
প্রথম বারে কোন বাবা-মা ই পারবেনা এটার চিকিৎসা করতে, তবে তাঁরা যেটা করবেন সেটা হলো এ অবস্থায় শিশুকে অবশ্যই একজন শিশু রোগ বিশষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাবেন তখন খিঁচুনি না থাকলেও। কারণ এটা বার বার হতে পারে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত। যাবার আগে খিঁচুনির সময় বাবা-মা যা করতে পারেন সেটা হলো শিশুকে একদিকে কাত করে শুইয়ে রাখবেন আর জ্বর কমানোর জন্য ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে সমস্ত শরীর মুছতে থাকবেন। দুই তিন মিনিট পর খিঁচুনি এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়, এক্ষেত্রে শিশু ভাল হয়ে গেছে এটা ভাবা যাবে না, ছয় বছর বয়স পর্যন্ত খিঁচুনি হতে পারে এটা ধরে নিয়েই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে যেন আর না হয়।
পরবর্তিতে আর যাতে খিঁচুনি না হয় তার জন্য আমরা যা করতে পারি সেগুলো হলোঃ
১। প্রথম বার খিঁচুনি হওয়ার পর এটা ধরেই নিতে হবে যে এটা ছয় বছর বয়স পর্যন্ত হবে, তবে কোন্ জ্বরে হবে তা কেউ বলতে পারবে না।
২। জ্বর আসার সাথে সাথেই জ্বরের ঔষধ যেমন প্যারাসিটামল আর খিঁচুনির বড়ি সেডিল ডোজ মোতাবেক খাওয়ানো শুরু করবেন।
৩। এদুটো ঔষধ সবসময় ঘরে কিনে রাখবেন।
৪। বাড়ির বাইরে গেলে ঔষধ দুটো সঙ্গে নিয়ে যাবেন, রাস্তায় জ্বর আসলেও সেখানেই ওগুলো খাওযাবেন।
৫। ছয়মাস থেকে এক বছর পর পর ডাক্তারের কাছে এসে ঔষধ দুটোর ডোজ ঠিক করে নেবেন।
৬। নিয়মগুলো শিশুর বয়স ছয় বছর পুর্ন হওয়া পর্যন্ত পালন করবেন।
লেখক: (শিশুরোগ) এর সাবেক সহকারী অধ্যাপক, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল।