শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ, ১৪৩১
মো. মুকসুদ আলম খান (মুকুট)।।
শেখ মুজিবের জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়, শৈশবে বাবা-মার আদরের খোকা এই বাঙ্গালির রাজনীতি করতে করতেই একদিন হয়ে ওঠে শেখ মজিব, শেখ সাহেব এবং মজিব ভাই। সময়ের পরিক্রমায় ১৯৬৯ এ হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু। এই জাতির রাষ্ট্রীয় পরিচয় প্রাপ্তির জটিল ও কঠিন পরিক্রমায় অনুঘটক ছিলেন বঙ্গবন্ধু, তাই তিনি আমাদের জাতির পিতা। শৈশব থেকে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন, স্কুল জীবন থেকে অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিলেন, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পথ আগলিয়ে দাড়িয়ে গিয়ে ছাত্র হলের ছাদের পানি পরার দীর্ঘ দিনের সমস্যার তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার দাবি আদায়ে কি সাহসিকতারই পরিচয় দিয়েছেন।
১৯৩৮ সালে ১৮ বছর বয়সে কারাবন্দী জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেছেন “আমায় যেদিন প্রথম জেল হয় সেদিন থেকেই আমার নাবালকত্ব ঘুচেছে বোধ হয়”। দারিদ্র্য মানুষের প্রতি বা মানুষের প্রতি সম্মান বোধই জনতালগ্ন নেতার বড় গুণ। আর এই গুণই তাকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালিতে পরিণত করেছে। একবার গোপালগঞ্জ এলাকায় বেশ খরা হয়েছিল। তিনি স্কুল ফেরার পথে কজন হতভাগ্য কৃষককে নিয়ে বাড়ি ফেরেন এবং প্রত্যককে দিয়ে দেন কিছু ধান ও চাল, কাউকে কিছু না বলেই। বাবা বাড়ি এসে খোকাকে গালমন্দ করলেন। কিন্তু খোকার বেশ দৃঢ় উত্তর ছিল “আমাদেরতো ধান ও চাল ভালোই আছে, তা থেকে ওদের সামান্য দিলাম, কারণ ওদেরও পেট আছে, ওদেরও ক্ষিদে আছে”। এভাবে জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে তিনি সাধারণ মানুষের সাথে সম্পৃক্ত থেকে সাধারণ মানুষের কাছের মানুষ হয়েছেন।
১৯৪৭ এর পাকিস্তানের স্বাধীনতার স্বাদ বিস্বাদে পরিণত হয় ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ শাসকের কারণে। তারা পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিভেদ ও বৈষম্য গড়ে তোলে, পূর্ব বাংলার মানুষকে তারা শোষণ করে। দুবছর যেতে না যেতেই মুসলিম লীগের প্রগতিশীল একটি অংশ আওয়ামী (মুসলিম) লীগ নামে ২৩ জুন ১৯৪৯ সালে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তার নেতৃত্ব দেন সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী, আবুল হাশিম, শেখ মুজিব ও শামসুল হক প্রমুখ। তার পূর্বে শেখ মুজিব ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারী ছাত্রলীগ নামে একটি ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
শেখ মুজিব সব সময় মানুষের কল্যাণের রাজনীতি করতেন। ১৯৫৪ নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবি হয়। যুক্তফ্রন্ট ৩০৯টি আসনের মধ্যে পায় ২২৩টি আসন, আওয়ামী লীগ একক ভাবে ১৩৪টি আসন পেয়ে সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করে। যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করলেও বেশী দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি, ওরা এ সরকারকে অচিরেই বরখাস্ত করে ভুয়া কারণ দেখিয়ে এখানেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়। একবার নির্বাচনী প্রচারণায় এক বৃদ্ধা মহিলা তার বাসায় ডেকে নিয়ে গরুর দুধ খাইয়ে বঙ্গবন্ধুকে কিছু টাকা উপহার দিয়ে ছিলেন, তখন তার উপলব্ধি হয়ে ছিল গরিব দুঃখি সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করা যাবেনা দেশের জন্য মানুষের জন্য কিছু করতেই হবে। রাজনৈতিক সকল সঠিক সিদ্ধান্ত তিনি গ্রহণ করতেন। কারণ তিনি সাধারণ মানুষের মনের কথা জানতেন, বুঝতেন এবং পড়তে পারতেন। তিনি জীবনে কোন ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন নাই। তাইতো তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক চিন্তাধারা বুঝতে হলে একটি বিষয়ে ভালোভাবে মনে রাখতে হবে। সেটি হলো তিনি তার জীবনের বেশীর ভাগ সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে থেকে বাংলার মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিক ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বহুদিন সংগ্রাম করেছেন। দেশ স্বাধীনের পর মাত্র সাড়ে তিন বছর তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন। স্বাধীনতার ৫০ বছরের তুলনায় এটি খুবই নগণ্য। তার রাজনৈতিক জীবনে ১২ বছর ৮ মাস অর্থাৎ ৪৬৮২ দিন কারাগারে থেকেছেন। একজন সাধারণ বন্দী হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু হলেও বঙ্গবন্ধু খুব অল্প সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক ক্ষমতা ও অতুলনীয় ভাষণ দিয়ে কোটি কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠেন। ভারতীয় কুটনৈতিক শশাংক এস ব্যানার্জির ভাষায় “শেখ মুজিবুর রহমান একজন দুধর্ষ সাহষী রাজনীতিবিদই ছিলেন না; বরং বিচক্ষন নেতাও ছিলেন। অনন্য অসাধারণ সংগঠক ছিলেন”। শেখ মুজিবকে দেখেছি “তিনি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পেতেন না এবং তিনি তার বিশ্বাস ও লক্ষ্য অর্জনে অসীম সাহসী, বেপরোয়া ও অবিচল ছিলেন”।
বঙ্গবন্ধু তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন “একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানব জাতি নিয়েই আমি ভাবি, একজন বাঙ্গালি হিসেবে যা কিছু বাঙ্গালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়, নিরন্তর সম্প্রীতির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে”। তিনি তার দলকে শক্তিশালী করেছেন জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন এবং ইয়াহিয়া খানের অধীনে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে একচ্ছত্র বিজয় অর্জন করে বিশ্ববাসীর সামনে বাঙ্গালির একমাত্র নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। ১৯৬৩ থেকে ৭১ মাত্র সাত বছরের একটু বেশি সময় নিয়ে স্বাধীনতার মুল আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন এবং জনগণের সামনে এই অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি জনগণের জন্য দেশের জন্য জীবন দিতে পারেন এই বিশ্বস্ততা অর্জন করেছেন। শেখ মুজিব ৬৬ সালে ৬ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করে তিনি তাঁর দল ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। ৬ দফা আসলে পাকিস্থান থেকে আলাদা হওয়ার কর্মসূচি। এ দাবীকে বন্ধ করতে না পেরে আগরতলা মামলায় ফাঁসি দিতে চেয়ে ছিলেন। মুজিব তখন বাঙ্গালি জাতির বিশ্বস্ত নেতা হয়ে ওঠেছেন তারই ধারাবাহিকতায় ছাত্র জনতার গণ আন্দোলনে আইয়ুবের পতন হয়। শেখ মুজিবসহ সকল রাজবন্দিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। আর সেই গণ অভুৎত্থানের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গালির নয়নের মনিতে পরিণত হন। ষাটের দশকে বাঙ্গালির মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, উনসত্তরের গণঅভূৎত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কারাগারে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও অবিচল থেকেছেন তিনি। সংগ্রামী এই জীবন শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতার মর্যাদায় অসীন করেছে।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ সবকিছু ধ্বংস করা হয়েছে। ১০ জানুয়ারী ১৯৭২ সালে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে তিনি দেশ পুর্ণগঠনের কাজে হাত দেন। মাত্র সাড়ে তিন বছর দেশ স্বাশন করেছেন, চমকপ্রদো ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন যুগান্তকারী বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে শোষণ মুক্ত সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। তিনি গণমানুষের কল্যাণে রাজনীতি করতেন, ১৯৭২ সালে স্বাশনতন্ত্র তথা সংবিধান প্রণয়ন ছিল খুব স্বল্প সময়ের উপহার, প্রথম ৫ঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নে “দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক নিরাপত্তা” বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছেন। ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক চালু করে বৈচিত্রময় সোনালী, জনতা, কৃষি, অগ্রণী, রূপালী ও পুবালী নামকরণ করে ছিলেন। খাদ্য সংকট নিরসণে টিসিবি এর মাধ্যমে রেশনিং সিস্টেম চালু করেন। পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাষ্ট্রায়াত্ব/জাতীয়করণ (ব্যাংক, বীমা, শিল্প, কল-কারখানা, স্কুল-কালেজ ইত্যাদি) করেছিলেন। বিসিক শিল্প নগরি চালুসহ বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠান চালু করেন। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পরীক্ষা মূলক ১২টি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র চালু করেন। সংস্কৃতি, খেলাধুলা সহ সকল ক্ষেত্রে গোড়াপত্তন করে ছিলেন, শিল্পকলা একাডেমি চালু, চলচিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (এফডিসি) পুর্ণগঠন করেন। ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাসহ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুর্ণগঠন করেন। প্রশাসনিক বেকেন্দ্রিকরণের অংশ হিসেবে ৬৪টি জেলা/সাব বিভাগে জেলা গর্ভনর নিয়োগ করেন। স্বল্প সময়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী ভারতে পাঠাতে সক্ষম হয়ে ছিলেন। রাষ্ট্রের স্থল সীমানা ও সমুদ্র সীমানা নির্ধারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ভূউপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেন যা আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে অগ্রনী ভূমিকা রাখছে। তাঁর পররাষ্ট্রনীতি ছিল কারো সাথে শত্রুতা নয় সবার সাথে বন্ধুত্ব সম্পর্ক বজায় রাখা, এই নীতি আজও বজায় রয়েছে। তিনি চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, রাশিয়া তথা বিশ্ব রাজনীতি ভালো করে জানতেন এবং বুঝতেন, অতি অল্প সময়ে প্রায় ২০টি উন্নত রাষ্ট্র সফর করে রাষ্ট্র প্রধানদের সাথে বৈঠক করেছেন এবং জোট নিরপেক্ষ সম্মেলন, ওআইসি সম্মেলন,কমন ওয়েল্থ সম্মেলন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের সদস্য পদ অর্জনে সক্ষম হয়েছিলেন, তিনিই প্রথম জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ প্রদান করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ছিলেন। বিশ্বশান্তিতে অনন্য ভূমিকার জন্য তিনি জুলিওকুরি শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন কৃষির উন্নতি ছাড়া এদেশের মানুষের মুক্তি আসতে পারেনা। এ লক্ষ্যে কৃষকদের ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেন। কৃষিভিত্তিক নতুন প্রতিষ্ঠান গড়া ও পুরাতন প্রতিষ্ঠান সমূহকে পুর্ণগঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন, তুলা উন্নয়ন বোর্ড ও সিড সার্টিফিকেশন এজেন্সি গঠন করেন, পুর্ণগঠন করেন হর্টিকালচার বোর্ড এবং রাবার উন্নয়নের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। সোনালী আঁশের সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করতে গঠন করেন পাট মন্ত্রণালয়, পাট গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে পুর্ণগঠন করেন। কৃষি উপকরণ তথা বীজ, সার ও সেচ সহজলভ্য করার লক্ষ্যে বিএডিসিকে পুর্ণগঠন করেন এবং সারাদেশে বীজ বিক্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। কৃষকের অর্থের যোগানদানের জন্য কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেন। কৃষি গবেষণা কাজের সমন্বয়ের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি), পুর্ণগঠন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এবং পারমানবিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
অধিকতর মেধাবী শিক্ষার্থীদের কৃষি শিক্ষায় আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়াদের মতো কৃষিবিদদের চাকুরি ক্ষেত্রে ১ম শ্রেণীর পদমর্যাদা ঘোষণা করেন, জাতির পিতার এই ঘোষণাকে স্মরণীয় করে রাখতে কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউশন বাংলাদেশ প্রতি বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি “কৃষিবিদ দিবস” হিসেবে পালন করে আসছে।
কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু বলে ছিলেন “আমার দেশের এক একর জমিতে যে ফসল হয় জাপানের এক একর জমিতে তার তিনগুণ ফসল হয়, কিন্তু আমার জমি দুনিয়ার সেরা জমি। আমি কেন সেই জমিতে দ্বিগুণ ফসল ফলাতে পারব না, তিনগুণ করতে পারব না? আমি যদি দ্বিগুণও করতে পারি তাহলে আমাকে খাদ্য কিনতে হবে না। আমি চাই বাংলাদেশের প্রত্যেক কৃষক ভাইয়ের কাছে, যারা সত্যিকারের কাজ করে, যারা প্যান্টপরা কাপড়পড়া ভদ্রলোক তাদের কাছেও চাই জমিতে যেতে হবে, ডাবল সফল করুন, প্রতিজ্ঞা করুন, আজ থেকে ওই শহীদদের কথা স্মরণ করে ডাবল ফসল করতে হবে। যদি ডাবল ফসল করতে পারি আমাদের অভাব ইনশাআল্লাহ হবে না”। জাতির পিতা চেয়েছিলেন সমবায় ভিত্তিক আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতিতে কৃষিতে ২য় বিপ্লবের কর্মসূচি প্রবর্তন করা। ১৯৭৪ সাল দেশে যে কৃত্রিম খাদ্য সংকট তৈরী করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু তাঁর দৃঢ়তা ও বিচক্ষণতায় সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিলেন, ফলোশ্রুতিতে ১৯৭৫ সালে দেশে খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার দারপ্রান্তে পৌঁছেছিল, যা ডিসেম্বর ১৯৭৫ ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সেই সময় এতটা সন্তোষজনক ছিল বিধায় ১৯৭৪-৭৫ সালে জিডিপি ৭ শতাংশের উপরে উঠা সম্ভব হয়েছিল।
১৯৭৫ সালের১৫ আগস্ট সংগঠিত হয় ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকান্ড, এই হত্যাকান্ডে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের ১৭ জন সদস্য নিহত হন। ১৮টি বুলেট ব্যবহার করা হয়েছে, জানা যায় বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তাঁর দুই পায়ের রগ কাটা হয়েছিল কি রকম নৃশংস ও নারকীয় এই হত্যাকান্ড ছিল তা সহজেই অনুমান করা যায়। বিদেশে অবস্থান করার সৈভাগ্যবসত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেচে যান। এই হত্যাকান্ডের মাধ্যমে দেশ বিপরীত দিকে চলতে শুরু করে। স্বাধীনতা বিরুধী জামাত/বিএনপি চক্র রাষ্ট্রিয় ক্ষমতা দখল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলন্ঠিত করে। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পান। ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯-২০১৩, ২০১৪-২০১৮, ২০১৯ থেকে চলতি ৪র্থ মেয়াদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার পদাংক ও নীতি অনুসরণ করেই দেশ পরিচালনা করছেন। দেশ এগিয়ে চলছে অদম্য অগ্রযাত্রায়, তাই যতদিন এ ভূখন্ড থাকবে এ দেশ থাকবে ততদিনই বঙ্গবন্ধু প্রাসংঙ্গিক হয়ে থাকবে।
২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিন এবং ২০২১ সালে ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ৫০ বছরসুবর্ণ জয়ন্তী । সরকার এবছরকে মুজিব শতবর্ষ হিসেবে সগৌরবে পালনের ঘোষণা দিয়েছিল কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের কারণে তা পালন করা সম্ভব হচ্ছে না।
বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের চলমান অদম্য অগ্রযাত্রা আমরা অব্যাহত রেখেই জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবো এটাই হবে মুজিব শতবর্ষের অংঙ্গিকার “জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু”।
লেখক: কৃষিবিদ মো. মুকসুদ আলম খান (মুকুট)
উপ পরিচালক, বিএডিসি।
যুগ্ম মহাসচিব, কৃষিবিদ ইনিস্টিউশন বাংলাদেশ।
সহ পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ।