বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ, ১৪৩১
অর্থনীতি।।
নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে সিলিন্ডার বা বোতলজাত গ্যাস— এমন অভিযোগ পাওয়া যায় যাচ্ছে নিয়মিত। এর বাইরে বাজারে সিলিন্ডারের মেয়াদোত্তীর্ণ ও ক্রস ফিলিংয়েরও অভিযোগ আছে। তাই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করবে। কাউকেই ‘ব্ল্যাংক চেক’ দেওয়া হবে না।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের সভাকক্ষে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এলপি গ্যাস উৎপাদনকারী, বাজারজাতকারী ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক সেমিনারে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, ক্যাব বলেছে— সেফটি ইস্যু খুব বার্নিং ইস্যু হয়ে গেছে। সিলিন্ডার বিস্ফোরণ কেন হবে? লাইফটাইম আছে। প্রস্তুতকারকদের এই জায়গায় মনোযোগ দিতে হবে। অনেক জায়গায় অতিরিক্ত লাভের আশায় সিলিন্ডার ক্রস ফিলিং করা হয়, এটি কোম্পানিগুলোর জন্য ক্ষতিকর। এখানে কোম্পানিগুলোকে মনোযোগ দিতে হবে। সিলিন্ডার গ্যাসের দামের বাজার অস্থির। কেন এমন হচ্ছে, এ বিষয়ে আমি গোয়েন্দা সংস্থাকে অনুরোধ করব অনুসন্ধান করতে। কোনো চক্রের জন্য সরকার বিব্রত হবে, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। আমদানিকারক, উৎপাদক ও বিক্রেতা পর্যায়ে আলোচনা করতে হবে, ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে দাম নিয়ে আসতে হবে।
সেমিনারে কোম্পানিগুলোর মধ্যে বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেডের হেড অব সেলস জাকারিয়া জালাল বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের এলপিজি ইনভেস্টমেন্ট ২২ বছরের। ২২ বছর পর ভোক্তা আমাদের ডাকল। এত বছর পর কেন ভোক্তা আমাদের ডাকল। তাহলে কি আমরা এতদিন মানুষকে ঠকিয়েছি।
তিনি বলেন, এলএনজি আমদানিতে ভর্তুকি দেয় সরকার, আর আমরা সিলিন্ডারে ৮২ টাকা ভ্যাট দেই। রেগুলেটরি ডিস্ট্রিবিউটর ও রিটেইলারদের জন্য বরাদ্দ রেখেছে ৭২ টাকা। অথচ এটার পরিবহন খরচ ১৬৩ টাকা। বাকি ৯১ টাকা কে দেবে? তেলের দাম বেড়েছে দুই মাস হলো। এখনও বিইআরসি ৬৫ টাকা লিটারে তেলের হিসাব করে। তাহলে কি সিলিন্ডার পরিবহনে আমাদের খরচ বাড়েনি? কে না জানে ডলারের দাম বেড়েছে, তারা কেন কম দামে ডলার ধরে দেয়? তাদের কাছে জানতে চাইলে কোনো জবাব পাওয়া যায় না।
বিইআরসি উপ-পরিচালক মো. ফিরোজ জামান বলেন, দাম নির্ধারণ প্রকৃত গণশুনানির মাধ্যমেই হয়। আমরা যারা কিনি, বাজারের স্থিতিশীলতা দরকার, কম দামে যেন পাই। সরকার যে আইন করেছে সেখানে ভোক্তা, ব্যবসায়ী সবার স্বার্থই দেখব। আমি কমিশনকে প্রতিবেদন দেব। ডিলাররা অভিযোগ করেছেন, তারা জায়গা পান না অভিযোগ জানাতে। ২০০৩ সালে আমরা কাজ শুরু করেছি। ভোক্তায় ব্যবসায়ীদের সমস্যা উপস্থাপন করার সুযোগ আছে, আইনের মধ্যে থেকে সমাধান করব।
সেমিনারে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) প্রতিনিধি কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, ২২ বছর ধরে এই সিলিন্ডার মার্কেটে ব্যবসায় আছি। অতীতে কখনো এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ক্রমাগত মার্কেট বাড়ছে কিন্তু কোনো পরিবর্তন আসছে না। যেমন খুশি তেমন দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। এখানে বিইআরসি কিছুই করতে পারছে না। তখন আমরা বাধ্য হয়েছি আদালতে যেতে। পরে আদালতের এক নির্দেশের মাধ্যমে বিইআরসি মূল্য নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়েছে। ক্যাব কখনোই চায় না দেশের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নষ্ট হোক। আমরা কারও পক্ষে-বিপক্ষে নই। আমরা চাই ভোক্তার স্বার্থে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি হোক।
সেমিনারে সিলিন্ডারের খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতা, ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটর ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।