রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
ডাঃ মো: আলী হাসান।।
আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ শুরু করলাম আর দুজন ওদের স্ব স্ব উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চলে গেল। এখানে একটু বলে রাখি সেই সময়ে কোন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রই স্বাস্থ্য সেবা দেবার মত অবস্থায় ছিল না। যে সমস্ত কেন্দ্রে নিজস্ব ভবন ছিল সেগুলো সবই টিনের তৈরি আর এগুলোর অবস্থানটাও সেরকম যুৎসই না, যেমন হাট বাজার বা অন্যকোন প্রতিষ্ঠান যেমন স্কুল এ রকম কিছু যেখানে মানুষ সামাজিক ভাবে বাস করতে পারে। তখন সরকার কোন জমি কিনতো না, দানের জমিতে ঘর তুলে সেখানে এরকম স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করতো। সঙ্গত কারণে কেন্দ্রটা ওই জমিদাতার বাড়ির কাছেই হতো।
আমাদের একজন যার এরকম একটা কেন্দ্রে পোস্টিং হলো উনি বয়সে আমার চেয়ে এক বছরের বড়, পাশ করেছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে। উনাকে সঙ্গত কারণেই দাদা সম্বোধন করতাম। তো দাদা যে কেন্দ্রে যাচ্ছেন সেখানে সরকারি কোন ঘর নাই, কেন্দ্রটা একজন প্রভাবশালী মুক্তিযোদ্ধা তদবির করে নিয়ে এসেছেন। স্বাস্থকেন্দ্র হিসেবে উনি উনার কাছারিঘরটা ছেড়ে দিয়েছেন, সেখানে বেড়া দিয়ে একপাশে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাজ চলে, অপর পাশে একজন জায়গীর থাকে মালিকের বাচ্চাদেক পড়ায়। দাদাকে ওই জায়গীরের সাথেই থাকতে হবে।
মালিকের কথা হলো বাইরে থেকে কেউ এসে অন্য কোথাও থাকতেও পারবে না, খেতেও পারবে না। বাস্তবে সেখানে বাইরে খাবার বা থাকবার কোন ব্যবস্থাও নাই। বিদ্যুত নাই, সন্ধ্যার পর মোটামুটি জগৎ নিশ্চুপ, এলাকায় প্রচুর গাছপালা, তার ভিতর থেকে রাত গভীরে মাঝে মাঝে শিয়ালের ডাক আসে। আশে পাশে বাজার ঘাট কিচ্ছু নাই যে সেখানে গিয়ে একটু কারো সাথে কথা বলবে বা একটু চা খাবে। শুধু সন্ধ্যাবেলায় হুলারহাট থেকে ঢাকাগামী একটা লঞ্চ আসে যাতে করে দাদা ঢাকা যেতে পারেন। লঞ্চটা যখন ঘাট ছেড়ে চলে যায় তখন দাদার মনের অবস্থ্যা কি হয়, হয়তো আমরা বুঝতে পাচ্ছি। চলবে…
লেখক: (শিশু বিভাগ) এর সাবেক সহকারী অধ্যাপক, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল।