শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ, ১৪৩১
চরফ্যাশন প্রতিনিধি, ভোলা।।
প্রাণঘাতি করোনায় সারাদেশে সরকারি নিন্দেশনা মেনে দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরকার আগামী ১২ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠান খোলার নির্দেশনা রয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, চরফ্যাশন পৌরসভাসহ উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ১লাখ ২২হাজার ৮শ ৬জন। আর এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থী জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন কর্মকান্ডে। আবার কেউ কেউ ঝরে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ধুলাবালির আস্তরণ পড়ে আছে।
বৃহম্পতিবার (০৯ সেপ্টেম্বর) উপজেলার একাধীক ইউনিয়নে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে স্কুলগুলোর দরজা জানালায় মাকরশার জাল আর বেঞ্চগুলোতে পড়ে আছে ধুলাবালির আস্তরণ। কয়েকটি স্কুলের মেঝেতে রয়েছে তালের খোসা। এছাড়াও উপকূলীয় এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বারান্দায় জেলেরা জাল সংস্কার করতেও দেখা যায়। কোথাও কোথাও স্কুল সংলগ্ন মাঠে চড়ানো গরু ছাগল কিংবা মহিশ স্কুলের ছায়াশিতল বারান্দায় বসে থাকতেও দেখা গিয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় গোয়াল ঘর কিংবা বালু-খোয়া রাখার গোলা। পরিস্থিতি দেখে বোঝার উপায় নেই এটা গরু রাখার গোয়াল ঘর নাকি বালু-খোয়া রাখার গোলা নাকি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দৃশ্যমান এতকিছুর পরেও এ চিত্রটি নজরে নেই প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের কারও।
দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা মোবাইল ও গেমসে আশক্ত হয়েছে। এছাড়াও পড়ালোখা চর্চা না থাকার কারণে অনেক কিশোর মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়ছে। পড়ালেখা না থাকা ও অভিভাবকদের উদাসিনতার ফলে পৌর শহরের কিছু এলাকায় বেড়েছে কিশোর গ্যাং। ধুমপানসহ দিন রাত আড্ডাবাজি ও মারামারি করতেও দেখা গেছে এসব কিশোর গ্যাংকে। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে চরফ্যাশনে বেড়েছে বাল্য বিবাহ। করোনালীন সময়ে অন্ততঃ ৫০টির অধিক বাল্যবিবাহ সম্পন্ন হয়েছে বলেও একাধীক সূত্র দাবী করেন।
উপজেলা নির্বহী ম্যাজিষ্ট্রেট আবি আবদুল্লাহ খান জানান, করোনার সময়ে ১৫টি বাল্যবিবাহ দেয়ার অপরাধে জেল জরিমানা করা হয়েছে একাধীক ব্যক্তির। শিক্ষা ব্যবস্থার এ বেহাল দশা অনুধাবন করে সরকার আগামী ১২ সেপ্টেম্বরস্বাস্থ্যবিধি মেনেসীমিত হারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ৪৭
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। যেমন, প্রতিষ্ঠানের আয়োতন অনুযায়ী শারিরিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের বসাতে হবে। উপস্থিত সকল শিক্ষার্থীকে বাধ্যমূলক মাস্ক ব্যবহার ও হ্যান্ড স্যানেটাইজার দিয়ে হাত ধৌত করার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকক্ষ ও টয়লেটসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপার ভাইজার জানান, বর্তমানে চরফ্যাশনের ১২টি কলেজ ও ৭০টি মাদ্রাসা এবং ৭৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এস্যাইনমেন্ট চলছে। এছাড়াও অনলাইনে ক্লাস চলমান রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা হোমওয়ার্ক করছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত সমস্যা নেই। এবং ২১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকরাই বিদ্যালয়গুলো পরিচ্ছন্ন রাখছে।
পশ্চিম নুরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত)শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ২১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিস্কার পরিছন্নতার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। আমি প্রায় ২০/২২টি বিদ্যালয় পরিদর্শন করছি।