রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
ডাঃ মো: আলী হাসান।।
যোগদান করার পর পরই বুঝতে পারলাম সিভিল সার্জনগণ যে হিসাব দিয়েছিলেন তা সঠিক ছিল। কারন আমরা এ উপজেলায় তিনজন যোগদান করলাম। আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আর বাকি দুজন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে। এ উপজলায় মোট উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র পাঁচটি, যোগদানের আগে পাঁচটিই ফাঁকা ছিল। ওদের পরে আরো তিনটা পদ তখনও ফাঁকাই থেকে গেল।
এর পর আমরা স্থায়ীভাবে থাকতে লাগলাম, আমি আমার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডরমিটরিতে আর ওরা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে, ওদের অবস্থার কথা পরে বলছি।
আমি এই হাসপাতালে যোগদিলাম ১৯৮৬ সালে। আমাদের এই হাসপাতাল ভবন এবং অন্যান্য আবাসিক ভবন তৈরি হয়েছিল ১৯৬৪ সালে। ডরমিটরিতে থাকতে গিয়ে দেখলাম তৈরি হবার পর এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ-এর জন্য আর কেউ তাকায়নি। আমাদের ভবনের বাইরের দিকে দেয়ালে শ্যাওলা জমে গেছে, ভিতরের দেয়াল থেকে জায়গায় জায়গায় প্লাস্টার খুলে গেছে, কোন কোন জায়গায় বিরাট অংশ ফাটল ধরে আলগা হয়ে গেছে, যে কোন সময় খসে পড়বে।
আমাদের হাসপাতাল ক্যাম্পাসের পাশেই উপজেলা কমপ্লেক্স, সেখানকার প্রত্যকটা ভবন আলো ঝলমল করছিল। দেখে নিজের কাছে নিজেকেই খুব ছোট মনে হচ্ছিল।
আমরা তিন জনই অনেক দূরের জেলা থেকে এসেছি; আমি বগুড়া, একজন মানিকগঞ্জ আর বাকিজন চুয়াডাঙ্গা। যেখানে এলাম সেটা প্রাকৃতিকভাবে আমাদের অঞ্চল থেকে আলাদা। এখানে কোন রাস্তাঘাট নাই, শুধু নদী আর খাল। নৌকাই মূল বাহন আর বাকিটুকু হাঁটা।
হাঁটতে গেলেও তিরিশ মিনিট পর একটা খাল পড়বেই যার উপর এক বাঁশের সাঁকো। সহজে বাড়ি যাওয়াও সম্ভব না, অতএব এখানে থেকেই চাকরি করতে হবে।
দিনের বেলা আউটডোরে রোগী দেখি, বিকেল রাত রোস্টারে জরুরি বিভাগে কাজ করি। মাঝে মাঝে ইন্ডোরে রাউন্ড দেই। চিকিৎসা দিতে গিয়ে যা দেখলাম সেটা দেখে মনে হলো কেন এত কষ্ট করে, এত এত বই পড়ে ডাক্তার হলাম। রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা হিসেবে ছিল প্রশ্রাব, পায়খানা আর রক্তের রুটিন টেস্ট, আর সাথে ছিল স্টেথো আর একটা বিপি মেশিন। চিন্তা করলাম এই দিয়ে কিভাবে রোগীর নিউমোনিয়া, পেটের ব্যথা, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি শনাক্ত করবো। তখন কেবল মেডিক্যাল কলেজ থেকে বের হয়ে এসেছি, সেখানকার গন্ধ তখনও গায়ে।
আমাদের তবুও কিছুটা সুবিধা ছিল, ভর্তি রেখে দেখে দেখে কিছু রোগের প্রায় কাছাকাছি চিকিৎসা দিতে পারতাম, কিন্তু যারা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আছে তাদের কি অবস্থা। সেখানে তার সম্বল স্টেথো আর বিপি মেশিন যা তার মেডিক্যাল এ্যাসিস্টান্টেরও আছে। চলবে…
লেখক: (শিশু বিভাগ) এর সাবেক সহকারী অধ্যাপক, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল।