রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
ডাঃ মো: আলী হাসান।।
গত পর্বে পরবর্তি ঘটনাগুলো হবে কিছুটা মর্মস্পর্শী এ রকম একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলাম। ইতিমধ্যে আমার এ কর্মস্থলে প্রায় তিন চার মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে, আমি এর মধ্যেই কিছুটা সিনিয়র হয়ে উঠেছি, বেশ কিছু পরিচিতিও বেড়েছে। মূল ঘটনায় যাবার আগে আমাদের দৈনন্দিন স্বাস্থ্যব্যবস্থার চিত্রটা একটু বলি। নিয়মিত আউটডোরে রোগী দেখি, বেশ কিছু রোগী আসে যাদের আসার কোন প্রয়োজনই নেই। তারা আসে কিছু নির্দিষ্ট ঔষধের নাম মুখস্থ করে, ওগুলো নিতে যেমন মেট্রো, প্যারাসিটামল, এ্যান্টাসিড আর ও আরএস।
আমাদের সময় টিকিটের কোন দাম ছিল না। কুড়ি থেকে ত্রিশ ভাগ রোগী আসতো যারা প্রকৃতই রোগী, তাদের চিকিৎসা দরকার হতো। সেই সময়ে সরকারি কিছু নির্দিষ্ট ঔষধ সাপ্লাই থাকতো যেমন কোট্রাইমোক্সাজল, এ্যামপিসিলিন, হিস্টাসিন, মাঝে মাঝে এ্যামোক্সিসিলিন, সালবিউটামল, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, আয়রন, কৃমির ঔষধ আর আগে যে নাম গুলো বললাম সেগুলো। ত্রৈমাসিক বরাদ্দ আসতো, মজার ব্যাপার হলো বেশির ভাগ ঔষধ এক মাসেই শেষ হয়ে যেতো। বাকি থাকতো শুধু এ্যান্টাসিড, ভিটামিন, আয়রন আর কৃমির ঔষধ। শেষের দিকে থাকতো শুধু ভিটামিন (বিসি) আর আয়রণ মানে এফ এস। এই শেষের দিকে যে কোন রোগী আসুক তাদেক ঐ দুই পদের ঔষধই দিতাম কারন তারা ঔষধ নেবেই যেহেতু সরকারি হাসপাতালে এসেছে। না দিয়ে যা প্রয়োজন তা বাইরে থেকে কিনতে দিলে কমন একটা কথা কানে ভেসে আসতো,”সরকারি ঔষধ বিক্রি করে দেন, আমাদেক দিবেন কোত্থেকে “। এ জন্য পরে আর কাউকে ঔষধ লিখে দিতাম না, তবে কেউ চাইলে তখন লিখে দিতাম।
এভাবে মাসের পর মাস চলে যাচ্ছে, আমরা বিসি আর এফ এস লিখেই চলছি আর ভাবছি এই আয়রণ আর ভিটামিন লেখার জন্যই কি ডাক্তার হয়েছিলাম! মনে হচ্ছিল যা শিখে এসেছিলাম তা সব মগজ থেকে আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। মাস ছয়েকের মধ্যে চারজন ডাক্তার চলে গেলেন, থাকলাম দুজন। মাস দুই পরে দুজন ডাক্তার আসলেন, তাদের একজন ইনসার্ভিস ট্রইনি অবস্হায় গাইনীতে ট্রেইনিং নেয়া আর একজন সার্জারিতে।
একদিন রাত আটটার দিকে একজন রোগী এলো, মহিলার দুইদিন আগে বাচ্চা হতে গিয়ে হাত বেড় হয়ে এসে বাচ্চাটা আড়াআড়ি ভাবে আটকিয়ে গেছে এবং ইতি মধ্যে মারাও গেছে। দেখলাম মহিলার কষ্ট, না পারে বসতে, না পারে ঘুমাতে, না পারে শুইতে। অবিরাম ব্যথা নিয়ে সে দুইদিন পর আমাদের কাছে এলো। না বললেও চলে, রোগীর লোকজন অত্যন্ত গরীব। তাড়াতাড়ি ভর্তি করে দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করলাম। চলবে…
লেখক: (শিশু বিভাগ) এর সাবেক সহকারী অধ্যাপক, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল।