শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১
ডাঃ মো: আলী হাসান।।
গত পর্বগুলোতে গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং এসকল জায়গায় স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে ডাক্তারগণ কি রকম পরিস্হিতির শিকার হন তার একটা ধারনা দেবার চেষ্টা করেছি। একজন প্রথমশ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা হিসাবে অন্য ক্যাডারের সাথে তুলনা করলে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে একটা ধারনা পাওয়া যায় যা দেশের সবচেয়ে মেধাবী মানুষটাকে মানসিক ভাবে তিলে তিলে গ্রাস করে ফেলে। সবচাইতে বড় বিষয় হলো এরকম একজন সম্পদ থেকে দেশ বা জাতি তেমন কোন কিছু পায়না। যেটা পায় সেটা একজন মেডিক্যাল এ্যাসিস্টান্টই দিতে পারে, বছরের পর বছর এরকম মেধার অপচয় হতেই থাকে।
আমরা অষ্টম বিসিএসে ক্যাডারভুক্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করলাম। সেই সময়ে আমার এক সহপাঠী যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদিল সেখানে ওর বাবাও ছিল মেডিক্যাল অফিসার। সেই সময়ে আমাদের এই বিভাগে প্রমোশন খুব একটা হতোনা আর এটার ধারাবাহিকতা প্রায় এখনও বিদ্যমান যদিও আগের চাইতে একটু ভাল হয়েছে তবে সেটা অন্য ক্যাডারের তুলনায় কিছুই না।
স্বাস্থ্য ক্যাডারের পদোন্নতি, ক্যাডার সার্ভিসের রুলস অনুযায়ী সুযোগ সুবিধা, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূরীকরণ, পদোন্নতি না হলেও চাকরির সিনিয়রিটি বিবেচনা করে সেটার প্রাপ্য অধিকার প্রদান ইত্যাদি চাকরিতে ঢুকার আগে থেকে শুনে আসতেছিলাম, চাকরি শেষ করলাম, এখনও সেগুলোই শুনছি, সুতরাং সেদিকে আলোচনা করে আর লাভ নাই। এখন আমাদের কাজ হবে যে অবস্হায় আছি এর ভিতরে থেকেই যতদূর পারা যায় নিজেদের মান-মর্যাদা রক্ষা করা, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এখানে আমাদের অবস্হা সম্পর্কে একটা মজার ঘটনা বলি। ১৯৮৮ সালের দিকে তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব একবার আমাদের জেলায় গিয়েছিলেন সরকারি সফরে, উনি জেলার সমস্ত ডাক্তার নিয়ে একটা দিকনির্দেশনা মূলক মিটিং করলেন যাতে স্বাস্থ্য সেবা আরো বাড়ানো যায। মাননীয় সচিব মহোদয় ডাক্তারদেক খুব উচ্চ আসনে উঠিয়ে বললেন আপনারা হলেন সমাজের ক্রিম, দেশের সেরা মেধাবী ছাত্ররাইতো কেবল মেডিক্যালে পড়তে পারে, জাতি আপনাদের নিকট থেকে অনেক কিছু আশা করে। আপনারা মহান পেশায় নিয়োজিত। এটা শোনার পর আমাদের এক বড়ভাই ছিলেন ওখানে, খুবই স্পষ্টবাদি মানুষ। উনি বললেন, স্যার আমরা সমাজের ক্রিম এজন্য আমরা ডাক্তার হতে পেরেছি, আপনারা ঐ রকম ক্রিম না এ জন্য ডাক্তার হতে পারেননি। আপনার ছেলেমেয়ে বড় হয়ে গেছে ভাল জায়গায় লেখাপড়া করছে, গাড়িতে ঘুরছে, আপনার মত যখন আমার চাকরির বয়ষ হবে তখন আমার সন্তানদেরও তো এ রকম পড়াশুনা করাতে চাইবো, গাড়িতে ঘুরাতে চাইবো।
স্যার আপনার মত চাকরির বযষের সময় আমি আপনার মত অফিস, গাড়ি বাড়ি, পাইক পেয়াদা কিছুই চাইবোনা, শুধু আপনার সমান বেতনটা পাবো কি না কারন তখন আমারও তো মৌলিক প্রয়োজনটা আপনার মতই হবে। আর যদি সেটা না হয় তাহলে আমার এ ক্রিম হয়ে লাভ কি। সচিব মহোদয় বোধকরি এ রকম কথা শুনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না, বললেন দেখেন এটা রাজনৈতিক নীতিনির্ধারণী ব্যাপার, আমাদেরতো করার কিছু নাই, আপনার কথাগুলো খুব ন্যায্য।চলবে…
লেখক: (শিশু বিভাগ) এর সাবেক সহকারী অধ্যাপক, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল।