শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ, ১৪৩১
ডাঃ মো: আলী হাসান।।
দাদা ওখানে থেকে কাজ করা শুরু করলেন। সকালে গোসল করতে হয় খালে, বাথরুম বলতে বাইরে জঙ্গলে একটা কাঁচা পায়খানা। সকালে দুপুরে রাতে তিন বেলাতেই ভাত, গৃহস্থঘরে সাধারণভাবে যা দিয়ে হয় তাই। সেই সময়ে গ্রামাঞ্চলে সকাল বিকাল চা এর প্রচলন ছিল না। ঐ আমলে মেডিক্যালে সাধারণত মধ্যবিত্ত আর নিস্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকেই বেশী আসতো পড়তে, বেসরকারি কোন মেডিক্যাল কলেজ ছিল না, কোন প্রাতিষ্ঠানিক কোচিং সিস্টেমও ছিল না। যারা আসতো তারা নিতান্তই প্রকৃত মেধাবীরাই আসতো এবং অধিকাংশই গ্রামাঞ্চলের। মেডিক্যাল কলেজ পুরোটাই আবাসিক, সেখানে সকালে কোন নাশতার ব্যবস্হা ছিলনা, শুধু দুপুরে আর রাতে ডাইনিং এ খাওয়া।
সকালে যে যার মত করে নাশতা করে নেয়, কেউ পরোটা, কেউ রুটি, আর আমি আর্থিক কারণে রুমেই খিচুড়ি করে খেতাম। বলতে চাচ্ছি যেটা সেটা হলো- যে যে রকম পারিবারিক অবস্থা থেকেই আসুক, পুরো সাতটা বছরে একটা সিস্টেমের মধ্যে ছিল, বিকেলে দল বেঁধে ক্যান্টিনে চা খাওয়া আড্ডা দেয়া, সেখান থেকে যদি এই রকম একটা পরিবেশে পড়তে হয়, হায়রে প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা, বিসিএস অফিসার।
দাদার অবস্থা দেখলাম জলের মাছ ডাঙ্গায় উঠালে যা হয় তাই। প্রতি সপ্তাহে বাড়ি যেতেন লঞ্চে ঢাকা হয়ে, যাবার দিন হেডকোয়ার্টারে আসতেন, দেখতাম চোখটা ছল ছল করছে, দাদা ইতি মধ্যে বিয়েও করেছেন।
মাসখানেক এভাবে চলার পর দাদা এ্যাডামেন্ট হয়ে গেলেন মাসে একদিন আসবেন, বেতনটা নিয়ে আবার এক মাস পর আসবেন। বললেন দেখো আমি ওখানে কি করতে পারি, আমি যা পারি আমার মেডিক্যাল এ্যাসিস্টান্টও তাই করে, কিছু করতে চাইলেও করতে পারিনা, সম্বল সেই কম্বল একটা স্টেথো আর বিপি।
দাদা যা করতে পারতেন সুযোগের অভাবে পাচ্ছেন না, মেডিক্যাল এ্যাসিস্ট্যান্টের মতই চিকিৎসা দেয়া লাগছে, তাহলে আমার কাছে থেকে দেশ কি সেবাটা পাচ্ছে।
তার পরের কাহিনী আরো মর্মান্তিক, মানুষ সামাজিক জীব, ভাব আদান প্রদানের জন্যতো উপযুক্ত পরিবেশ লাগে, সম পর্যায়ের মানুষ লাগে, সেখানেতো কিছু নাই, আমিওতো একজন মানুষ। কথাগুলো শুনার পর খুব খারাপ লাগলো, তার চাইতে বড় কথা এমন একজন সরকারি কর্মকর্তার নিকট থেকে জাতি কি পাচ্ছে। একজন উপযুক্ত মানুষকে সিস্টেমে ফেলে হাত পা বেধে রাখা হচ্ছে। চলবে…
লেখক: (শিশু বিভাগ) এর সাবেক সহকারী অধ্যাপক, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল।