শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ, ১৪৩১
ডাঃ মো: আলী হাসান।।
যে কথা সেই কাজ, দাদা বাড়ি গিয়ে আর ফিরলেন না, ফিরলেন সেই এক মাস পর। চিন্তা করলাম আমিওতো দাদার চাইতে আরো দূরে থেকে এসেছি, ইচ্ছা করলেই যেতে পারি না, আর আমার দাদার মতো বাধ্যবাধকতা নাই। তখন মাসে বেতন পাই ১৬৫০ টাকা, বাড়িতে মাসে দুইবার যাওয়া আসা করলেই এ বেতন শেষ।
সেটা বড় কথা না, আমি উপজেলা প্রোপারে আছি, কারেন্ট আছে, সহকর্মি সিনিয়র ডাক্তার ভাইয়েরা আছে, তাদের কেউ কেউ সপরিবারে থাকে। যারা সিঙ্গল ছিল তাদের সাথে বিকেলে ঘুরে বেড়ানো, আড্ডা দেয়া, সন্ধ্যার পর অফিসার্স ক্লাবে গিয়ে অন্যান্য দপ্তরের অফিসারদের সাথে গল্প করা, খেলাধুলা করা, রাতে বাসায় ফিরে সিঙ্গলরা মিলে রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত টিভি দেখা, এতসব মিলিয়ে আমার সময়টা খারাপ যাচ্ছিল না।
নিজের অবস্থানটা দাদার সাথে মিলিয়ে দেখলাম তার কষ্টটা কত মর্মান্তিক। ইচ্ছা করলেই উনি স্বাধীনভাবে থাকতে পাচ্ছেন না, খেতে পাচ্ছেন না, কারো সাথে মন খুলে কথা বলতে পাচ্ছেন না, তদুপরি তার কাছে থেকে জাতি একজন মেডিক্যাল এ্যাসিস্টান্টের বেশী কিছু পাচ্ছে না, দক্ষ জনশক্তির এক বিশাল অপচয়। শুধুমাত্র সুষ্ঠু পরিকল্পনা আর ব্যবস্থাপনার অভাবে এক বিরাট জনশক্তিকে নিস্ক্রিয় করে রাখলাম।
পরবর্তি মাসেই উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় দাদাকে নিয়ে বিশাল আলোচনা। সভাতেই uh& fpoকে দাদা সম্বন্ধে জবাব দিতে বলা হলো। উনি অফিসিয়াল ভাষায় জবাব দিলেন- তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। আমাদের বেতন তখন উপজেলা পরিষদ থেকে হতো।
উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেবের এ ব্যাপারে খুব একটা মাথা ব্যথা নাই, কারণ উনি বাস্তব অবস্থাটা বুঝেন। কিন্তু বাধ সাধলো সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আর তার মেম্বারসহ অন্যান্য অনুগামীরা। তাদের কথা ডাক্তার সরকারি বেতন খায়, বাড়ি ভাড়া নেয়, কর্মস্থলে থাকবে না কেন। কিন্তু তারা এটা কিছুতেই বুঝতে চাইলো না যে একজন গেজেটেড অফিসার, তাঁর মর্যাদা কি, তার কি পরিবেশ দরকার, তার জীবন যাত্রা কেমন হওয়া উচিৎ। তাদের একটা বড় যুক্তি ছিল, ম্যাজিস্ট্রেট স্যার, ইঞ্জিনিয়র স্যার যদি এখানে থাকতে পারে তো ঐ ডাক্তার এত বড় কি অফিসার হয়েছে যে থাকতে পারবে না?
উপজেলা পরিষদের পরবর্তি মাসিক সভায় রেজুভেনেশন পাশ হলো বিষয়টা সিভিল সার্জনকে জানানো হবে এবং হলোও তাই। মাননীয় সিভিল সার্জন তার আইনমত ব্যবস্থা নিলেন, যেহেতু এটা উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত। অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত আসতে মাস ছয়েক চলে গেল, দাদা ইতিমধ্যে চেষ্টা তদবির করে নিজ জেলা মানিকগঞ্জে চলে গেলেন। যাবার সময় দুসপ্তাহের অননুমোদিত অনুপস্থিতির একটা কাগজ হাতে পেলেন।
এখানে যে বিষয়টা লক্ষনীয় সেটা হলো দাদা সব মিলিয়ে ঐ জায়গায় অফিসিয়ালী ছিলেন দশ মাসের মত, কিন্তু কাজ করেছেন খুব বেশি হলে এক মাস। সিস্টেমের কারনে নয় মাস কিন্তু জনগন তার কোন সার্ভিসই পায়নি, লাভটা কাদের হলো! চলবে…
লেখক: (শিশু বিভাগ) এর সাবেক সহকারী অধ্যাপক, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল।