শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ, ১৪৩১
ডাঃ মো: আলী হাসান।।
দাদার ভাগ্য কি নির্ধারিত হয়েছিল তা গত পর্বে বলেছি, কিন্তু যেমন আমি এক লাইনে শেষ করেছি বাস্তবে কিন্তু অত সহজে শেষ হয়নি। সিভিল সার্জন মহোদয় উপজেলা পরিষদের রেজুলেশনের কপি পেয়ে নিয়ম মাফিক কাজ শুরু করলেন। প্রথমে কারণ দর্শানোর নোটিশ, তারপর তদন্ত কমিটি গঠন, তদন্তশেষে সেটার প্রতিবেদন প্রাপ্তি, সেটার আলোকে দাদাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, এগুলো করতেই চার মাস পার হয়ে গেল।
সিভিল সার্জন মহোদয় এগুলো করছিলেন আর আমি ওখানে বসে চিন্তা করছিলাম দাদাকে কিভাবে সাহায্য করা যায় আইনের ভিতরে থেকে। কারণ দাদা ওখানে থাকেননি এটাতো সত্য, বাস্তবতা যা ই হোক, ওটা আইনে টিকবে না। তাই উনি যাতে সামনের দিনগুলোতে আরো বিপদে না পড়ে সে চেষ্টা করতে হবে। আর ঐ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সশরীরে উপস্থিত থেকে চাকরি করা কারো পক্ষেই সম্ভব না।
ইতিমধ্যে অল্পদিনেই ওখানে আমার একটা অবস্থান তৈরি হয়ে গেল, সেটা আমার গুণের জন্য না ভাগ্যের জন্য তা বলতে পারবো না। সকল চেয়ারম্যান মেম্বার থেকে শুরু করে উপজেলা পরিষদের প্রায় সবার কাছেই বেশ গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠলাম।
পরের দিন উপজেলা পরিষদের মাসিক সভা, জানি এ সভাতেও দাদার ব্যাপারে ফলোআপ নিয়ে আলোচনা হবে। আমি রাতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে গেলাম এবং সব বুঝিয়ে বললাম, এ-ও বললাম এখন কি করা যায়। উনি বললেন, দেখেন যা বললেন তা সবই আমি জানি, কিন্তু বুঝেনতো আমি চেয়ারম্যান, সবার কথা আমাকে শুনতে হয়। ওরা যেটা বলছে তা সম্পূর্ন আইনসঙ্গত এবং ন্যায্য কিন্তু কোন মতেই বাস্তব সম্মত না। সরকারতো একটা আদেশ জারি করে এবং মনে করে এই একটা আদেশে দেশের সব জায়গায় একই রকম চলবে।
বললাম তাহলে কি করা যায়। উনি বললেন, আপনেই বলেন কি করলে সব কূল রক্ষা পায়। সুযোগ আর তার মনোভাবটা আমার বুঝা হয়ে গেছে এতক্ষণে তাই বলেই ফেললাম, দাদাকে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় আমরা এখানে আনি, আপনে শুধু ঐ চেয়ারম্যানকে সামলান। উনিও মনে হলো এ রকমই কিছু ভাবছিলেন। পরেরদিন পরিষদের মিটিংয়ে আমি গেলাম আর uh& fpo কে বললাম আপনে শুধু চুপ থাকেন আর দেখেন আমি কি করি। এখানে বলে রাখি জনস্বার্থে একজন uh& fpo তার উপজেলায় যে কোন কর্মকর্তা কর্মচারীকে যে কোন জায়গায় কাজ করতে আদেশ করতে পারেন।
মিটিংএ এটা নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে তখন আমি চেয়ারম্যানকে বললাম, আপনার আর আপনার মেম্বারের আজ দুপুরে চাইনীজের দাওয়াত, সব বিল আমি দেবো। উনি বললেন আজগুবি দাওয়াত দেন, এখানে চাইনীজ পাওয়া যায়? তখন আমি বললাম যদি এটা বুঝে থাকেন তাহলে আমরা যেটা করবো সেটা মেনে নেবেন, নইলে আমার ডাক্তার প্রত্যেকদিন ওখানে থাকবে, তার মর্যাদা বুঝে বাসস্থান নিশ্চিত করবেন, সামাজিক নিরাপত্তা দেবেন, তার চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করবেন এখানে যেমন আছে। এখানে কোয়ার্টার আছে, অফিসার্স ক্লাব আছে, সব অফিসার আছে তাদের সাথে কথা বলার সুযোগ আছে এগুলো নিশ্চিত করা সরকারের, আর এখানে আপনার, যেহেতু আপনে একজন সরকারের অংশ। উনিও আমার কথার মর্মার্থ কি বুঝে গেলেন এবং সিদ্ধান্ত পরিষদের উপর ছেড়ে দিলেন।
তারপর থেকে দাদা উপজেলা হাসপাতালে কাজ করতে থাকলেন আর চেষ্টাতদবির করতে থাকলেন নিজ জেলায় যাবার। এটা করতে তার পুরো দশ মাস লেগে গেল। শুধুমাত্র বেখাপ্পা সিস্টেমের জন্য একজন অফিসারকে মানসিকভাবে চরম হেস্তনেস্ত হতে হলো কিন্তু সেই জনগণ কিছুই পেলো না। চলবে…
লেখক: (শিশু বিভাগ) এর সাবেক সহকারী অধ্যাপক, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল।