রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
নওগাঁ প্রতিনিধি।।
উত্তরের জনপদ নওগাঁ জেলায় দিনদিন হারিয়ে যেতে বসেছে বাঙালি ঐতিহ্য সংস্কৃতির সাথে মিশে থাকা গ্রামীণ লোকজ হস্তশিল্প বাঁশ বেত ও মৃৎ হস্ত শিল্পের তৈরি পণ্য। পুঁজিস্বল্পতা, প্রয়োজনীয় উপকরণ উৎপাদন হ্রাস শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি এবং বর্তমান সময়ে বাহারি রংঙের মেলামাইন, প্লাস্টিক, সিলভার পন্য ব্যবহারের ফলে দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে এই হস্তশিল্প। এসব পেশার মানুষগুলো টিকতে না পেরে বেছে নিচ্ছেন অন্য পেশা।
কেউ কাটছে বাঁশ, কেউবা তুলছে পাতলা চটা, আবার মৃৎ পল্লীতে কেউবা তার নিপুণ হাতের শৈল্পিক ছোঁয়ায় তৈরি করছে মাটির খেলানাসহ ব্যাবহৃত আসবাবপত্র। উপজেলার বেশ কয়েকটি বেত ও মৃৎ শিল্পপল্লী ঘুরে জানা গেছে, প্রায় দুইশত বছর পূর্বে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগমন ঘটে এশিল্পের কারিগরদের উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। সে সময়ে নদী পথে যোগাযোগ ব্যাবস্থা সুবিধা ও লাভজনক থাকায় তারা নদীর ধারে ভিটা/জমি বেছে নেন স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য ধীরে ধীরে নদী সংযুক্ত বিভিন্ন গ্রামে গড়ে উঠে এসব গ্রামীণ লোকজ হস্তশিল্প পল্লী।
বাঁশ বেত ও মৃৎ এই গ্রামীণ লোকজ হস্তশিল্প বাঙালি সংস্কৃতির বড় একটি অংশ.সারাদেশের মতো নওগাঁর তৈরি কুলা ঝুড়ি টোপা মাথল চাটাই শরপোস ডালি খলই চালুন বেতের কাটা ধামা মোড়া চেয়ার, মৃৎ শিল্পের হাড়ি পাতিল, থালা কলস, কাসা ঢাকন, চাড়ি সাতপুঁতি ডাবর ও বাচ্চাদের খেলনা জিনিসপত্র। একসময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে শোভা পেত ব্যাবহৃত এই লোকজ হস্তশিল্প। কদরও ছিলো বেশ, কিন্তু পুঁজিস্বল্পতা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি এবং শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধির সাথে সময়ের পালাবদলে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক ভাবে বাজারজাত করতে না পারায় এসব শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে।
জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলায় এসব শিল্পের কারিগর আছে প্রায় পাঁচ হাজারের অধিক। কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করছে তারা। তাদের দাবী সরকার দেশে এবং দেশের বাহিরে তাদের জন্য বাজার খুঁজতে সহযোগিতা করলে এবং আধুনিক চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ প্রদান করলে এ গ্রামীণ হস্তশিল্প দেশের গুন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশে সুমান অর্জন করে বিদেশী মুদ্রা অর্জনে সহায়ক হবে।
মৃৎ হস্তশিল্প কারিগর শ্রী কৃষ্ণ পাল(৭৫) বলেন, পূর্ব পুরুষের উত্তরসূরি হিসেবে আভাব অনাটনের মাঝেও আমরা এই পেশা ধরে রেখেছি। বর্তমান সময়ে প্রয়োজনীয় উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এবং বাহারি প্লাস্টিক পন্যের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ায় হয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ হস্তশিল্প ধরে রাখা সম্ভব হবে না। বাঙালী ঐতিহ্য সংস্কৃতির এই গ্রামীণ লোকজ হস্তশিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রয়োজন।