শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
অনলাইন ডেস্ক।।
কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় রাজশাহীর দুই ওসির বিরুদ্ধে নারী ওসির স্বামীকে ‘শিবিরকর্মী’ বানিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকের কাছে এ অভিযোগ করেছেন নারী পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) হোসনে আরা বেগম পুতুল। তিনি বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদায় কর্মরত।
অভিযুক্তরা হলেন, নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ এবং দামকুড়া থানায় ওসি মাহবুব আলম। এদের মধ্যে মাহবুব আলম ছিলেন অভিযোগকারী নারী ওসি হোসনে আরা বেগমের সাবেক স্বামী। ২০১৮ সালে মাহবুবের সঙ্গে হোসনে আরার বিচ্ছেদ হয়।
তবে অভিযুক্ত দু’জনই নারী ওসির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ঘটনা তদন্তের দাবি করেছেন।
নারী পুলিশ পরিদর্শক হোসনে আরা অভিযোগে উল্লেখ করেন, ২০১৩ সালে পুলিশ পরিদর্শক মাহবুব আলম তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে ২০১৮ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটান হোসনে আরা। এরপর থেকে মাহবুব আলম তাকে বিভিন্নভাবে বিরক্ত করতেন। পরে রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা থানার ললিতাহার এলাকার আব্দুল ওদুদের ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মাহবুব হুসাইন নামের আরেক যুবককে তিনি বিয়ে করেন।
অভিযোগে হোসনে আরা উল্লেখ করেন, বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মণ রাজশাহীতে যোগদান করার পর তার সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর থেকে নিবারণ চন্দ্র বর্মন হোসনে আরাকে বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিয়ে বিরক্ত করতে থাকেন। ওসি মাহবুবকে তালাক দিয়ে অন্য ছেলেকে বিয়ে করায় হোসনে আরাকে প্রায়ই হুমকি দিতেন ওসি নিবারণ।
গত ১৬ মার্চ রাত দেড়টার সময় হোসনে আরার স্বামী মাহবুব হুসাইন পুলিশ একাডেমিতে কর্মরত ওসি হোসনে আরাকে ফোনে জানান, বাসায় পুলিশ এসেছে। এরপর হোসনে আরা বোয়ালিয়া থানার ওসি (তদন্ত) লতিফের সঙ্গে কথা বললে পুলিশ তার স্বামীর বাসা থেকে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পর আড়াইটার দিকে আবারো পুলিশ এসে তার স্বামী মাহবুব হুসাইনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।
এর পরদিন সকাল ৮ টা ১০ মিনিটে হোসনে আরা বোয়ালিয়া থানায় এসে ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণের কাছে জানতে চাইলে ওসি তাকে বলেন, ‘সেইতো দৌড়াইয়া আমার কাছে আসলা। কিন্তু সময়মত অসো নাই, তখন তো আমাকে ভালো লাগে নাই। তোমার স্বামী শিবির করে।’ দুপুরে তিনি হোসনে আরাকে জানান, তার স্বামীর নামে মামলা হবে। ওইদিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তার স্বামীসহ গ্রেপ্তারদের আদালতে পাঠানো হয়। তখন তিনি জানতে পারেন, তার স্বামীর নামে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দিয়েছে এবং তার নামের পাশে শিবিরকর্মী লিখে দিয়েছে। তবে হোসনে আরা দাবি করেছেন, তার স্বামী কোনভাবেই জামাত-শিবিরের সঙ্গে জড়িত না। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও জড়িত নয়।
পরে তিনি তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি তাকে জানান, বোয়ালিয়া থানার এসআই মতিনসহ ওই টিমে থাকা অন্যান্য সদস্যরা শুধু তার স্বামীকেই শারীরিক নির্যাতন করেছেন। এসআই মতিন তার স্বামীকে বলেছেন, ‘শালা মাহবুব স্যারের বউকে বিয়ে করার শখ হয়েছে। মাহাবুব স্যার তোর জীবন বরবাদ করে দিবে। তুই মনে রাখিস।’
পরিদর্শক হোসনে আরা আরো জানান, তার স্বামী পেশায় একজন সাংবাদিক। রাজশাহী সংবাদ নামের একটি স্থানীয় পত্রিকায় তিনি কাজ করেন। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মণ তার ব্যক্তিগত নোংরা উদ্দেশ্য আমার উপর প্রয়োগ করতে না পেরে এবং ওসি মাহবুব আলম পূর্ববর্তী আক্রোশ থেকে আমার জীবনটা ধ্বংস করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে স্বামীকে মিথ্যা বানোয়াট মামলায় চালান দিয়েছে।’
এবিষয়ে জানতে চাইলে ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘হোসনে আরার স্বামী একজন শিবিরকর্মী। তার ভাইও শিবিরের নেতা। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হোসনে আরার সুপারিশে তাকে ছেড়ে না দেয়ায় ক্ষুব্দ হয়ে এসব অভিযোগ করেছেন। এসব অভিযোগের কোন ভিত্তি নাই। তদন্ত হলেই প্রমাণ হয়ে যাবে।’
দামকুড়া থানার ওসি ও হোসনে আরার সাবেক স্বামী মাহবুব আলম বলেন, দুইবছর আগেই তার সঙ্গে তালাক হয়েছে। আমি নিজেও বিয়ে করে সংসার করছি। তাকে কখনোই বিরক্ত করিনি। আমি প্রতিশোধ পরায়ণ মানুষ না।
তিনি বলেন, মামুন হুয়াইন শিবিরকর্মী হিসেবে একটি মামলায় আসামি হলে আমার বাসায় আসে। তখন আমার স্ত্রী হোসনে আরাকে সে বড় বোন সম্বোধন করে আত্মীয়তা করে। এরপর অর্ধেক বয়সী ছেলেটাকে হোসনে আরা বিয়ে করে। তার গ্রেপ্তারে আমার কোন হাত নেই।
এসব বিষয়ে রাজশাহীর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্তের আগে কোন মন্তব্য করতে চাই না।-সমকাল