রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
ফিচার ডেস্ক।।
বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনায় চরম অর্থ ও খাদ্য সংকট। অন্যদিকে পেশাগত সংকটের কারণে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন বাদ্যযন্ত্র পেশায় ঢুলি শিল্পীরা। করোনা সংকটকালে সব ধরনের আচার অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে এই পেশার মানুষগুলো। বাধ্য হয়েই জীবন-জীবিকার তাগিদে নিজেদের পেশাকে ভুলে অন্য পেশায় জড়িয়ে যাচ্ছেন তারা। ফলে বিলীন হতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প।
ঢুলিরা বলছেন, বংশপরম্পরায় এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত তারা। কিন্তু নিজেদের মাথা গোজারও ঠাঁই নেই। কিন্তু দিন দিন লালিত এই শিল্প হারিয়ে যাবার ফলে পথে বসেছেন তারা।
তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের কালিয়ামনি গ্রাম। এই গ্রামের ১৮ টি সনাতন হিন্দু ধর্মালম্বি পরিবারের ঢুলিরা দীর্ঘকাল ধরে জীবন যাপন করছেন ঢোল বাদ্য ও সানাই বাজিয়ে। মাত্র সাড়ে আট শতক জমিতে ১৮টি পরিবারের প্রায় শতাধিক সদস্যের বসবাস। টিনের চালা খরের ঘরে নিদারুণ কষ্টে বাস করছেন তারা। প্রতিটি পরিবারের ৪/৫ জন সদস্য একটি ঘরেই গাদাগাদি করে জীবনে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
তারা বলছেন, একদিকে মাথা গোজার ঠাঁই নেই অন্যদিকে আয় রোজগারও নেই। বাপ দাদার আমল থেকেই বিয়ে, খেলাধুলা, পূজা-পার্বণ অনুষ্ঠানে ঢাক-ঢোল বাদ্য বাজিয়ে আয় রোজগার করে সংসার চালিয়ে আসছেন। এই কাজ ছাড়া তারা অন্য কাজও করতে পারেন না ভালোভাবে। করোনাকাল থেকে সব আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে বিপর্যস্ত জীবন অতিবাহিত করছেন। অভাবের তাড়নায় অনেকে ধর্মও পরিবর্তন করেছেন। অনেকে বাদ্য যন্ত্র বিক্রি করে দিচ্ছেন। এই গোত্রের মানুষগুলো এখন চেয়ে আছে সরকারি সহায়তার আশায়।
কালিয়ামনি গ্রামের ঢুলি দলের দলনেতা সুরেন্দ্রনাথ রায় জানান, বংশ পরম্পরায় এই শিল্পের সাথে জড়িত আমরা। বাপদাদার কাছ থেকে শিখেছি। প্রথমে আসর জমিয়ে অনেক ভালো ভালো কাজ পেয়ে অনেক আয় করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বেশ ভালই দিন কাটতো। করোনায় সকল প্রকার অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমরা বড় অসহায় হয়ে পড়েছি, কাজের অভাবে অনাহারেই কেটে যাচ্ছে প্রতিটি দিন।
শান্তিনা রায় জানান, ঘরে স্বামী ও সন্তান অসুস্থ। কাজ নেই সরকার সবাইকে সাহায্য করে আমরা তো কিছুই পেলাম না। চলবো কিভাবে ভগবান ছাড়া আমাদের আর কেউ নেই।
মানবিক তরুণ ফরিদ আহমেদ জানান, সকল ধর্মের মানুষের আমন্ত্রণে নানা অনুষ্ঠানে ঢোলসহ বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মানুষকে আনন্দ দেন এই ঢুলি শিল্পীরা। কিন্তু তারা চরম দৈন্য দশায় দিন যাপন করছে। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসা দরকার।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এস কে দোয়েল বলেন, কালের বির্বতনে এই শিল্পের সাথে জড়িত মানুষের জীবন প্রবাহ থমকে গেছে। অভাব অনটনে পড়ে নিদারুণ কষ্টে দিন যাপন আর মহামারি করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়ায় এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি বিলীন হতে বসেছে। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। এরকম আরও অনেক সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক শিল্প। বিষয়গুলো নজর দেওয়া উচিত।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, মাত্র সাড়ে ৮ শতক জমিতে ১৮টি পরিবারের বসবাস বিষয়টি আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি। বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। সরকারিভাবে আমরা চেষ্টা করবো ঢুলি শিল্পীদের সব ধরনের সহায়তা করার।